একটি প্রাণবন্ত নোট তৈরির আদ্যোপান্ত |
‘নোট’ শব্দটি একজন শিক্ষার্থীর কাছে খুব
পরিচিত বিষয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্ধারিত সিলেবাস আয়ত্ত করে ঐ সিলেবাসের
মূল বিষয়বস্তু বুঝতে পারা বা বুঝাতে পারার জন্য নোট খুব কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে।
তবে কোন নোট যখন মূল বিষয় বা বইয়ের মিনি ভার্সন হয় বা
গতানুগতিক গদ্যরীতিতে করা হয়, তখন নোট তার সঠিক উদ্দেশ্য বা গুরত্ব হারায়।
শিক্ষার্থীদের কাছে তার কোন গ্রহনযোগ্যতা থাকে না। নোট কর্তাও তার নোট পেশ
করতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
কিন্তু সেই নোটকে প্রাণবন্ত অর্থাৎ সবার কাছে আকর্ষণীয় করতে কিছুটা যত্নবান বা বাস্তবিক আইডিয়া কাজে লাগানো যেতে পারে।
এই
বিষয়টি হয়তো পাঠক মহলে আলোচনার কোন বিষয় নয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দ্বীনি
ভাইদের প্রশ্নের জবাব হিসেবে এই বিষয়ে লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
যদিও এই বিষয়ে আলাদা কোন তথ্য নির্ভর ব্লগ বা আলোচনা নেই।
তবুও আমি এক্ষেত্রে নিজের কিছু টিপস পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে পারি। একটু খেয়াল করলে হয়তো সবাই উপকৃত হতে পারবে।
তবে
আমি এক্ষেত্রে কুরআন, হাদিসের বিশেষ কোন অংশ এবং যেকোন বই বা বিশেষ
শিরোনামের ক্ষেত্রে নোট তৈরির কৌশল আলোচনা করবো। সেই সাথে সহজে বুঝার
স্বার্থে প্রত্যেকটার উদাহরণ টানবো।
পরিচিতিঃ
যেকোন নোটের
জন্য পরিচিতি খুবই গুরত্বপূর্ণ। কুরআনের ক্ষেত্রে উক্ত নোটটি কোন সুরার কত
নং আয়াত, এটি কোরআনের কোন পারার কত নং সুরা, এর মোট আয়াত সংখ্যা, রুকু
সংখ্যা, সিজদাহ সংখ্যা, অবতীর্ণ হওয়ার স্থান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সুরার
নাম, নামকরণ কিভাবে হয়েছে ইত্যাদি যুক্ত করা।
যেমনঃ সুরা নুরের ২৭-৩০ আয়াতের দারস নোটের ক্ষেত্রে-
সুরা পরিচিতিঃ
সুরা নং- ২৪
পারা নং- ১৮
মোট আয়াত- ৬৪
মোট রুকু -৯
সিজদাহ- নাই
নাযিল হওয়ার স্থান- মাদিনা
পূর্ববর্তী সুরা- মুমিনুন
পরবর্তী সুরা- ফুরকান
নামকরণ- পঞ্চম রুকূ’র প্রথম আয়াত তথা ৩৫ নং আয়াত থেকে সূরার নাম গৃহীত হয়েছে।
আবার
হাদিসের ক্ষেত্রে উক্ত হাদিসটি কোন প্রকাশনীর, কোন গ্রন্থের, কোন
অধ্যায়ের, কত নং হাদিস, এই হাদিসটি আর কোন কোন গ্রন্থে আছে এবং গ্রন্থের ও
গ্রন্থাকারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি যুক্ত করা। এছাড়া হাদিসটি কোন রাবীর
বর্ণনা, সেই রাবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী যুক্ত হতে পারে।
যেমনঃ কেয়ামতের ৫টি প্রশ্ন সংক্রান্ত হাদিস নোটের ক্ষেত্রে-
বর্ণনাকারী (রাবী)- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
গ্রন্থ- জামী তিরমিযী
অধ্যায় নং- ৪০ (কেয়ামত)
হাদিস নং- ২৪১৯
প্রকাশনী- আল মদিনা প্রকাশনী
এছাড়া হাদিসটি আছে- তালীকুর রগীব: ১/৭৬, রওযুন নাযির: ৬৪৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ: ৯৪৬
ইবনে মাসউদ (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী-
জামী তিরমিযী গ্রন্থের পরিচিতি-
ঈমাম তিরমিযী (র.) এর জীবনী আলোচনা।
আবার
বই নোটের ক্ষেত্রে বইটির নামকরণের সার্থকতা, লেখকের ও অনুবাদকের নাম, লেখক
ও অনুবাদকের জীবনী, বইটি কোন প্রকাশনীর, এই নামে অন্য কোন প্রকাশনীর বই
আছে কিনা, এই নামে অন্য কোন লেখকের বই আছে কিনা?
যেমনঃ হেদায়াত বই নোটের ক্ষেত্রে-
হেদায়াত নামকরণের কারণ ও সার্থকতা-
লেখক- সাইয়্যেদ আবুল আ’লা
লেখকের সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচনা-
অনুবাদ- মুহাম্মদ আবদুর রহীম (জীবনী)
প্রকাশনী- আধুনিক প্রকাশনী
আবার ‘কবিরা গুনাহ বইটিন বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যেমনঃ পিস পাবলিকেশন, দারুস সালাম বাংলাদেশ, মাকতাবাতুল হেরা।
আবার এই বিষয়ের উপর আরো কিছু বই আছে, যেমনঃ কবিরা গুনাহ ও তাওবা, কিতাবুল কাবায়ের, কবিরা গুনাহ ও গীবত, হারাম ও কবিরা গুনাহ।
আর আলোচনা নোটের ক্ষেত্রে উক্ত আলোচনার শব্দগুলোকে আলাদা আলাদা সংগায়িত করা, এই আলোচনা গুরত্ব কতটুকু ইত্যাদি যুক্ত করা যেতে পারে।
যেমনঃ ‘সময় ব্যবস্থাপনা’ আলোচনা নোটের ক্ষেত্রে-
সময় কি?, সময়ে গুরত্ব দেয়া কেন দরকার?
ব্যবস্থাপনা কি? এটি কিভাবে করা যায়?
একজন মুমিনের জীবনে সময় ব্যবস্থাপনার গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা।
প্রেক্ষাপটঃ
কোনো নোট তৈরির এবং তার গুরত্ব সর্বমহলে বুঝানো সহজ হয় যদি উক্ত নোট বা বিষয়ের প্রেক্ষাপট জানা যায়।
কুরআনের
ক্ষেত্রে নাযিলে সময়কাল, তৎকালীন সময়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানা, এই আয়াত
নাযিলের আগে সবার অবস্থা কেমন ছিল, কোন ঘটনাকে সামনে রেখে এই আয়াত নাযিল
হয়েছে, এর ফলশ্রুতিতে সবাই প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ইত্যাদি নোটবদ্ধ হতে পারে।
হাদিসের
ক্ষেত্রে রাসুল (স.) কোন প্রেক্ষাপটে হাদিসটি বলেছেন, এই হাদিস বলার আগে ও
পরে হাদিসের অনুসারীদের (সাহাবী) অবস্থা কেমন হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে আর
কোন রকমের বর্ণনা আছে আছে কিনা?
বই নোটের ক্ষেত্রে বইটি কত সালে, কেন,
কোন বিষয়ের উপর লেখা হয়েছে, বইটি কোনো বক্তৃতা থেকে লিখিত কিনা, এই বইটির
রিভিউ পর্যালোচনা, মোট বিক্রির কপি সংখ্যা, মোট সংস্করণ ও পরিমার্জন
ইত্যাদি যুক্ত করা।
আলোচনা নোটের ক্ষেত্রে এই আলোচনার সাথে সমসাময়িক প্রক্ষাপট এবং তৎকালীন সময়ের প্রক্ষাপট বা ঘটনাবলী উল্লেখ করা যেতে পারে।
আনুষাঙ্গিক বিষয়াবলিঃ
একটি নোটকে আরো প্রাণবন্ত
করতে আনুষ্ঠানিক বিষয়াবলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কুরআনের ক্ষেত্রে এই
সুরার আলোৎচ্য বিষয়ের সাথে আর কোন সুরার মিল আছে, এই সুরার বিষয়বস্তু ও
চুম্বকীয় অংশ কি, এটি কি ধরণের কথা দিয়ে শুরু হলো, এরকম আর কোনো সুরা আছে
কিনা, কতটি ও কি কি সূরা আছে, এ সূরার স্বতন্ত্র কোন বৈশিষ্ট্য আছে কিনা
ইত্যাদি।
উদাহরণস্বরূপ বলক যায়, সুরা নুর ও সুরা আহযাবের আলোৎচ বিষয়ের
কিছু মিল পাওয়া যায়, আবার সুরা নুরের একটা বিশেষ চুম্বকীয় দিক হলো ইফকের
ঘটনা, আবার সুরা বাকার শুরু হয়েছে আয়াতে মুতাশাবিহাত (আলিফ-লাম-রা) এরকম
আয়াত দিয়ে কুরআনে ২৯ টি সুরা শুরু হয়েছে, আবার সুরা তাওব্র একটি স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্য হলো এ সুরায় ‘বিসমিল্লাহ’ নেই, এরকম কিছু তথ্যের সুংযুক্তি করা।
ঠিক
তেমনিভাবে হাদিসের ক্ষেত্রে হাদিসটির সহীহ হওয়ার মান ও মানার হুকুম কি,
কোন ফকীহ হাদিসটি সম্পর্কে কি বলেছেন, হাদিস সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস,
হাদিস মানার গুরত্ব, কুরআন ও হাদিসের মধ্যে পার্থক্য যুক্ত করা যেতে পারে।
বই
নোটের ক্ষেত্রে বইটির ভূমিকা, কতটি ভাষায় অনূদিত এবং আলোচনা নোটের
ক্ষেত্রে এর সাথে রিলেটেড আলোচনাগুলোর রেফারেন্স বইয়ের তথ্য, এই বিষয়ে
আলোচনা করেছেন এমন কয়েকজন বক্তার তথ্যসুত্র যুক্ত করা।
বিস্তারিত আলোচনাঃ
এটি একটি নোটের মূল পয়েন্ট, যার মাধ্যম পুরো বিষয়টি সবার সামনে স্পষ্ট হবে।
এক্ষেত্রে পুরো বিষয়টির শব্দ ভিত্তিক বা বিষয় ভিত্তিক ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
এখানে
যেকোনো নোটের ক্ষেত্রে শব্দগুলোর বা বিষয়টির সাথে রিলেটেড কুরআনের আয়াত
(রেফারেন্সসহ), হাদিস (রেফারেন্সসহ), কোন বইয়ের রেফারেন্স, কবিতার লাইন,
উর্দু বা ফার্সি কোন শের, কোনো মনীষীর উক্তি, ইংরেজি কোনো কোটেশন, রিলেটেড
কোন ঘটনাপ্রবাহ বা দৃষ্টান্ত, কোন বক্তার ডায়ালগ কোট করা।
পাশাপাশি সমসাময়িক অবস্থার চিত্রও তুলে ধরা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ
আমার কিছু অভিজ্ঞতা উল্লেখ করি, যে বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে চাই তার উপর
কুরআন ও হাদীসের কোথায় কি বর্ণনা আছে তা খুঁজে বের করে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
এক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক আয়াত হাদিসের বই, তাফহীমুল কুরআনের ২০ তম খন্ড, গুগল
সার্চ করে নির্ধারিত বিষয়ের সাথে রিলেটেড আয়াত হাদিস রেফারেন্সসহ পাওয়া
যেতে পারে।
প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর কোন কোন লেখক বই লিখেছেন। এজন্য কোন
নোট করার আগে সেই বইটি অধ্যয়ন করে সেখান থেকে দু’একটি লাইন রেফারেন্স
হিসেবে নেয়া যায়। রেফারেন্সের সাথে বইয়ের নাম, লেখকের নাম, পৃষ্ঠা নাম্বার,
সুযোগ হলে লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া যায়।
আমরা ছোট থেকেই বিভিন্ন
কবিতা ও গানের সাথে পরিচিত। একটু খেয়াল করে যদি আমাদের আয়ত্ত করা সেই কবিতা
ও গানের লাইনকে কোড করে নির্ধারিত বিষয়ের নোটের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়।
আমি ছোট বেলায় যত কবিতা ও গান মুখস্ত করেছি, সেগুলো একটু স্মরণ করার চেষ্টা
করি, মোবাইলে বা ডায়েরিতে লিখে রাখি, আর প্রয়োজন অনুসারে সংশ্লিষ্ট নোটের
সাথে জুড়ে দিই। বর্তমানেও যখন যে গান বা কবিতা শুনি প্রয়োজন মনে করলে
গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিখে রাখি।
আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইসলামিক
স্কলারদের বক্তব্য বা আলোচনা শুনে থাকি। সেই আলোচনায় অনেক আলোচনা বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ শের বা কবিতা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে আমরা যদি সেগুলো লিখে
রাখতে পারি, তাহলে প্রয়োজন অনুসারে বিষয়ভিত্তিক অালোচনার সাথে যুক্ত করতে
পারি। কারন, একটি বিষয়ের সাথে যদি কোন উর্দু বা ফার্সি শের যুক্ত হয়, তবে
সেই নোটটি সবার হৃদয়ে অবশ্যই দাগ কাটে।
এছাড়া যেকোন আলোচনার সাথে
রিলেটেড বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের (মুসলিম বা অমুসলিম) বক্তব্যও থাকতে পারে।
সেগুলো সংগ্রহ করে নোটে সংযুক্ত করা যায়। পাশাপাশি নির্ধারিত বিষয়ের উপর
বিভিন্ন স্কলারদের বক্তব্য থাকে, তাদের বক্তব্য থেকে চুম্বকীয় কোন অংশও
নোটের সাথে যুক্ত করা যায়। এতে করে নোটটি বেশি প্রাণবন্ত হবে বলে আমার
অবজারভেশন।
শিক্ষণীয় দিকঃ
একটি নোটের সারমর্ম হলো তার শিক্ষণীয়
দিক আলোচনা করা। এক্ষেত্রে অল্প কথায় পয়েন্ট আকারে কাব্যিক শব্দের গাঁথুনি
দিয়ে শিক্ষণীয় দিক উল্লেখ করা যেতে পারে, যা শ্রোতা বা পাঠকের হৃদয়কে
শিহরিত করবে। আর শিক্ষণীয় দিকের মধ্যে পুরো নোটটি মূল বিষয়বস্তুও উঠে আসবে।
প্রিয় পাঠক! এই আইডিয়া অনুসারে যদি একটি নোট তৈরি হয়, সেটা হোক দারসুল
কুরআন, দারসুল হাদিস, বইনোট কিংবা আলোচনা নোট তা সবার কাছে একটি প্রাণবন্ত
নোট হয়ে উঠবে। আর এতে করে আমাদের মধ্যে যে একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে নোট
দেখে হুবহু কপি নোট করা, দা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জ্ঞানের সমুদ্রের ডুবুরি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
0 Comments