দারসুল কুরআনঃ সূরা আল-আনকাবুত (আয়াত: ১-৬)

 


 সুরা পরিচিতিঃ

সুরা নং- ২৯

মোট আয়াত- ৬৯

মোট রুকু- ৭

পারা নং- ২০

সুরার নামের অর্থ- মাকড়শা

অবতীর্ণ- মক্কায়


আয়াতঃ

الـمّ ০ اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْا اَنْ يَّقُوْلُوْا امَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ ০ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ ০ اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّاتِ اَنْ يَّسْبِقُوْنَا ط سَاءَ مَا يَحْكُمُوْنَ ০ مَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَاءَ اللهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللهِ لاتٍ ط وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ ০ وَمَنْ جهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِه ط اِنَّ اللهَ لَغَنِىٌّ عَنِ الْعلَمِينَ ০


ভাবানুবাদঃ

‘আলিফ-লাম-মীম। লোকেরা কি মনে করেছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এই কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের পূর্ববর্তীদেরকে আমি পরীক্ষা করেছি। কারণ আল্লাহকে তো অবশ্যই জানতে হবে, ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী। যারা অন্যায় কাজ করছে তারা কি ভাবছে যে তারা আমাকে অতিক্রম করে যেতে পারবে? তারা যা ফায়সালা করছে তা খুবই মন্দ। আর যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে, সাক্ষাতের নির্দিষ্ট ক্ষণটি অবশ্যই আসবে। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। আর যেই ব্যক্তি জিহাদ করে সে তার নিজের জন্যই জিহাদ করে। অবশ্যই আল্লাহ গোটা সৃষ্টি জগত থেকে অমুখাপেক্ষী।’


নামকরণঃ

এই সূরার ৪১ নং আয়াতের অংশবিশেষ,

﴿مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا ۖ وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنكَبُوتِ ۖ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ﴾

থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ সূরার মধ্যে ’আনকাবুত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, এটি সে সূরা।


নাযিলের সময়কাল ও শানে নুযুলঃ

ঈসায়ী ৬১০ সনে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়াত লাভ করেন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নির্দেশেই তিনি প্রথম তিনটি বছর নিরবে আদ্ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহর কাজ করতে থাকেন। অতপর নির্দেশ আসে সরবে দা‘ওয়াতী কাজ করার।

সংগে সংগে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আছ্ছাফা পাহাড়ের ওপর ওঠে “ইয়া সাবাহাহ” “ইয়া সাবাহাহ” ধ্বনি দিতে শুরু করেন।

লোকদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে সমবেত করে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহিত করার জন্য কোন উচ্চস্থানে উঠে ‘ইয়া সাবাহাহ’ ধ্বনি দেওয়া ছিলো আরব সমাজের একটি নিয়ম।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কণ্ঠে উক্ত ধ্বনি উচ্চারিত হলে মাক্কার লোকেরা ছুটে এসে আছ্ছাফা পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হয়।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি যদি বলি তোমাদের ওপর হামলা চালাবার জন্য একদল অশ্বারোহী সৈন্য আবু কুবাইস পাহাড়ের ওদিকে অপেক্ষমান, তোমরা কি বিশ্বাস করবে?’ লোকেরা বললো, ‘অবশ্যই বিশ্বাস করবো। কারণ তুমি তো কখনো মিথ্যা কথা বল না।’ তখন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আখিরাতের সমূহ বিপদ এবং তা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ শেষ হলে আবু লাহাব এক খণ্ড পাথর নবীর দিকে ছুঁড়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তার হাতে তুলে নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে সে বলে, ‘তোমার সর্বনাশ হোক, এই জন্য তুমি আমাদেরকে ডেকে এনেছো?’ অতপর সে লোকদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়।

তখন থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সরবে আদ্ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহর কাজ চালাতে থাকেন। সত্য সন্ধানী যুবক যুবতীরা একে একে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হতে থাকে। অন্য দিকে মারমুখো হতে থাকে মুশরিক শক্তি। নবুওয়াতের পঞ্চম সনে এসে অবস্থা খুবই নাজুক আকার ধারণ করে। বড়ো রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হন মুমিনগণ। হাবশায় হিজরাত তখনো শুরু হয়নি। এই সময়টিতে নাযিল হয় সূরা আল ‘আনকাবূত।


আলোচ্য বিষয় ও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুঃ

সূরাটি পড়লে মনে হবে এটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখন মক্কায় মুসলমানরা মহা বিপদ- মুসিবতের মধ্যে অবস্থান করছিল। কাফেরদের পক্ষ থেকে পূর্ণ শক্তিতে চলছিল ইসলামের বিরোধিতা এবং মু’মিনদের ওপর চালানো হচ্ছিল কঠোর জুলুম- নিপীড়ন । এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহ একদিকে সাচ্চা ঈমানদারদের লজ্জা দেবার জন্য এ সূরাটি নাযিল করেন। এই সাথে এর মধ্যে মক্কায় কাফেরদেরকেও এ মর্মে কঠোর ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে যে, নিজেদের জন্য এমন পরিণতি ডেকে এনো না সত্যের সাথে শত্রুতা পোষণকারীরা প্রতি যুগে যার সম্মুখীন হয়ে এসেছে।

সে সময় কিছু কিছু যুবক যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন এ প্রসঙ্গে তারও জবাব দেয়া হয়েছে। যেমন তাদের পিতা- মাতারা তাদের ওপর মুহাম্মদ (সা) এর দ্বীন ত্যাগ করে তাদের দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। তাদের পিতা- মাতারা বলতো, যে কুরআনের প্রতি তোমরা ঈমান এনেছো তাতেও তো লেখা আছে যে, মা- বাপের হক সবচেয়ে বেশি। কাজেই আমরা যা কিছু বলছি তাই তোমরা মেনে নাও। নয়তো তোমরা নিজেদের ঈমান বিরোধী কাজে লিপ্ত হবে। ৮ আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে।

অনুরূপভাবে কোন কোন নওমুসলিমকে তাদের গোত্রের লোকেরা বলতো, তোমরা আমাদের কথা মেনে নাও এবং ঐ ব্যক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাও, এ জন্য আযাব- সওয়াব যাই হোক, তার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি। যদি এ জন্য আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন তাহলে আমরা অগ্রবর্তী হয়ে বলে দেবোঃ জনাব, এ বেচারাদের কোন দোষ নেই। আমরাই এদেরকে ঈমান ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলাম। কাজেই আমাদের পাকড়াও করুন। এর জবাব দেয়া হয়েছে ১২-১৩ আয়াতে।

এ সূরায় যে কাহিনীগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেখানেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ দিকটিই সুস্পষ্ট করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী নবীদেরকে দেখো, তারা কেমন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। কত দীর্ঘকাল ধরে তারা নির্যাতিত হয়েছেন। তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সাহায্য করা হয়েছে। কাজেই ভয় পেয়ো না। আল্লাহর সাহায্য নিশ্চয়ই আসবে কিন্তু পরীক্ষার একটি সময়কাল অতিবাহিত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন । মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দেবার সাথে সাথে মক্কার কাফেরদেরকেও এ কাহিনীগুলোতে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকড়াও হতে দেরি হয়, তাহলে তাতে আর কোনদিন পাকড়াও হবেই না বলে মনে করে নিয়ো না। অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর চিহ্ন ও ধ্বংসাবশেষ তোমাদের সামনে রয়েছে। দেখে নাও, শেষ পর্যন্ত তাদের সর্বনাশ হয়েই গেছে এবং আল্লাহ তার নবীদেরকে সাহায্য করেছেন।

তারপর মুসলমানদেরকে এভাবে পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, জুলুম নির্যাতন যদি তোমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ঈমান পরিত্যাগ করার পরিবর্তে তোমরা ঘরবাড়ি ত্যাগ করে বের হয়ে যাও। আল্লাহর যমীন অনেক প্রশস্ত । যেখানে আল্লাহর বন্দেগী করার সুযোগ আছে সেখানে চলে যাও।

এসব কথার সাথে সাথে কাফেরদেরকে বুঝাবার দিকটিও বাদ দেয়া হয়নি। তাওহীদ ও আখেরাত উভয় সত্যকে যুক্তিসহকারে তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। শিরককে খণ্ডন করা হয়েছে। বিশ্ব- জাহানের নির্দশনাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে জানানো হয়েছে যে, আমার নবী তোমাদের সামনে যে শিক্ষা পেশ করছেন এ নির্দশনাবলী তার সত্যতা প্রমাণ করছে।


ব্যাখ্যাঃ

প্রথম আয়াতটিতে রয়েছে কয়েকটি হরফ।

এই গুলোকে হুরুফে মুকাত্তা‘আত বলে। হুরুফে মুকাত্তা‘আত অর্থ হচ্ছে কর্তিত, খণ্ডিত বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর গুচ্ছ। এই গুলোর কোন তাৎপর্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তুলে ধরেন নি। অতএব এই গুলো সম্পর্কে নিরব থাকাই আমাদের কর্তব্য।


দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে,

اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْا اَنْ يَّقُوْلُوْا امَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ ০

 ‘লোকেরা কি মনে করছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এই কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?’

এই আয়াতাংশে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর একটি শাশ্বত বিধানের কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। আর সেটি হচ্ছে : যারা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ঈমান আনয়নের ঘোষণা দেবে তাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।

يُفْتَنُوْنَ  শব্দটি ফিতনা শব্দ থেকে উৎসারিত। ফিতনা শব্দের অর্থ পরীক্ষা।

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আল কুরআনে ফিতনা শব্দটির সমার্থক আরো কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন : আব্লা ও ইবতিলা।


তৃতীয় আয়াতের প্রথমাংশে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ ০

‘অবশ্যই আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছি।’

আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম)-এর জীবন কথা এই বক্তব্যেরই সাক্ষ্য বহন করে।

একবার পূর্ববর্তীকালের কোন এক মুমিন ব্যক্তির পরীক্ষা সম্পর্কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

قَدْ كَانَ مِنْ قَبْلِكُمْ يُؤْخَذُ الرَّجُلَ فَيُحْفَرُلَهُ فِىْ الاَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيْهَا ثُمَّ يُؤْتى بِالْمِنْشَارِ فَيُؤْضعُ عَلى رَاْئِسِهِ فَيُجْعَلُ نِصْفَيْنِ وَ يُمْشَطِ بِاَمْشَاطِ الْحَدِيْدِ مَا دُوْنَ لَحْمِه وَعَظْمِه مَا يَصُدَّهُ ذلِكَ عَنْ دِيْنِه ০

(খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা), ছাহীহ আল বুখারী)

‘তোমাদের পূর্ববর্তীকালে কোন এক ব্যক্তিকে ধরে এনে মাটিতে গর্ত করে তাতে তার শরীরের নিম্ন ভাগ পোঁতা হয়। তারপর করাত এনে তার মাথার ওপর চালিয়ে তাকে দুই টুকরা করে ফেলা হয়। অতপর লোহার চিরুনি দিয়ে তার শরীরের গোশত ও হাড় ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলা হয়। কিন্তু কোন কিছুই ওই ব্যক্তিকে তার দীন ত্যাগ করাতে পারেনি।’

ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)Ñএর একনিষ্ঠ অনুসারী একদল মুমিন দক্ষিণ আরবের নাজরানে বসবাস করতেন। ইয়ামানের ইয়াহুদী রাজা যু-নাওয়াস নাজরান আক্রমণ করে এবং অধিবাসীদেরকে ইয়াহুদী বনে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তাঁরা ভ্রান্ত ধর্ম গ্রহণ করতে সম্মত হননি। ফলে কতগুলো বড়ো বড়ো গর্ত খনন করে, ওই গুলোতে কাঠ-খড়ি ফেলে আগুন জ্বালিয়ে ওই মুমিনদেরকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়। মাত্র একজন মুমিন ব্যক্তি বেঁচে যান। বাকিরা সবাই আগুনে পুড়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁদের সংখ্যা ছিলো বিশ হাজার। ঈমানের এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও তাঁরা তাঁদের দীন ত্যাগ করেননি।

পরীক্ষা চাওয়া মুমিনদের কাজ নয়। পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে, বিচলিত হয়ে পড়ে, আল্লাহর বিরুদ্ধে অনুযোগ করাও মুমিনদের কাজ নয়। বরং আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থেকে দৃঢ়তা অবলম্বন করা মুমিনদের কাজ।

সূরা আল বাকারা-র ১৫৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَىْءٍ مِّنَ الْخَوفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الاَمْوَالِ وَالاَنْفُسِ وَالثَّمَرتِ ط وَبَشِّرِ الصّبِرِيْنَ ০

‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা এবং জান-মাল-আয়ের নোকসান ঘটিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে যারা ছবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।’

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

اِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمَ الْبَلاَءِ وَ اِنَّ اللهَ تَعَالى اِذَا اَحَبَّ قَوْمًا اِبْتِلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْط .

(আনাস (রা), জামে আত তিরমিযী)

‘কষ্ট বেশি হলে প্রতিদানও বেশি। আল্লাহ যখন কোন জনগোষ্ঠীকে ভালোবাসেন তখন তাকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। যেই ব্যক্তি এই পরীক্ষায় পড়ে আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন কখনো কখনো মুমিনদেরকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়ে নিজের সান্নিধ্যে ডেকে নেন। আবার কখনো কখনো কঠিন পরীক্ষার পর মুমিনদেরকে দুনিয়ার জীবনে  সাহায্য ও বিজয় দান করেন।

সূরা আল বাকারা-র ২১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ ط مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ امَنُوْا مَعَهُ مَتى نَصْرُ اللهِ ط اَلا اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ ০

‘তোমরা কি ভেবেছো এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের ওপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো পরিস্থিতি আপতিত হয়নি? তাদের ওপর কঠিন পরিস্থিতি, কঠিন বিপদ এসেছে এবং তাদেরকে কাঁপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন কি শেষ পর্যন্ত রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলে উঠেছে, ‘কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য!’ (তখন বলা হয়েছে), ‘ওহে, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই।’

তৃতীয় আয়াতের দ্বিতীয়াংশে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكذِبِيْنَ ০

‘আল্লাহকে তো অবশ্যই জানতে হবে ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।’

মনে রাখা প্রয়োজন, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন এমন সত্তা নন যে ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী তা জানার জন্য তাঁকে পরীক্ষার রিজাল্টের ওপর নির্ভর করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির কর্মকাণ্ড তাঁর দৃষ্টির অধীন। আবার, প্রত্যেক ব্যক্তির মনের অবস্থা তাঁর জ্ঞানের অধীন।

আসলে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন চান খাঁটি মুমিনদের ঈমানের খাঁটিত্বের উদ্ভাসন। তিনি চান, শত বাধার সম্মুখীন হয়েও মুমিনগণ দীনের ওপর অটল থেকে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করুক।


চতুর্থ আয়াতে ইসলাম বিদ্বেষীদের অন্যায় কর্মকাণ্ড যে শেষাবধি তাদের নিজেদের জন্যই মহা ক্ষতির কারণ হবে তা বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّاتِ اَنْ يَّسْبِقُوْنَا ط سَاءَ مَا يَحْكُمُوْنَ ০

‘যারা অন্যায় কাজ করছে তারা কি ভাবছে তারা আমাকে অতিক্রম করে যেতে পারবে? তারা যা ফায়সালা করছে তা খুবই মন্দ।’

অর্থাৎ আল্লাহকে ছাড়িয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন কিছু দিনের জন্য ঢিল দিলেও এক সময় তাদেরকে পাকড়াও করবেন এবং তাদেরকে কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবেন।


পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

مَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ اللهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللهِ لاتٍ ط وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

‘যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে, সাক্ষাতের নির্দিষ্ট ক্ষণটি অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’

মুমিন ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তার প্রতিটি কথা শুনেন, প্রতিটি বিষয় জানেন এবং তাকে অবশ্যই আল্লাহর নিকট হাজির হতে হবে। সে দুনিয়ায় এমন ভাবে জীবন যাপন করতে চায় যাতে সে আখিরাতে আল্লাহর শাস্তি থেকে নাজাত পায়, সেখানে সে সম্মানিত হয়, সমাদৃত ব্যক্তি রূপে জান্নাতে স্থান পায় এবং আল্লাহর দর্শন লাভ করে ধন্য হয়।

পক্ষান্তরে আল্লাহদ্রোহী একজন ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করে থাকে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার কোন আগ্রহ তার মনে স্থান পায় না।

এই প্রসংগে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ اَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ اَحَبَّ اللهُ لِقَائَهُ وَ مَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَائَهُ .

[আয়িশা আছ ছিদ্দিকা (রা), ছাহীহ মুসলিম।]

“যেই ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করা পছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাত লাভ পছন্দ করেন। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ পছন্দ করে না, আল্লাহও তার সাক্ষাত লাভ পছন্দ করেন না।”


ষষ্ঠ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

وَمَنْ جهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِه ط اِنَّ اللهَ لَغَنِىٌّ عَنِ الْعلَمِيْنَ ০

‘আর যেই ব্যক্তি জিহাদ করে, সে তার নিজের জন্যই জিহাদ করে। অবশ্যই আল্লাহ গোটা বিশ্ব জগত থেকে অমুখাপেক্ষী।’

‘আল জিহাদ’ একটি ব্যাপক অর্থবোধক পরিভাষা।

চিন্তা-চেতনায় কোনভাবেই জাহিলিয়াতের অনুপ্রবেশ ঘটতে না দেওয়ার প্রচেষ্টা জারি রাখা আল জিহাদ।

পার্থিব ভোগ-বিলাসে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হওয়ার হাতছানিকে রুখে দেওয়ার প্রচেষ্টা আল জিহাদ।

কু-প্রবৃত্তির তাড়নার বিরুদ্ধে লড়তে থাকা আল জিহাদ।

সমাজে প্রচলিত কু-প্রথা ও কু-সংস্কারের প্রভাব মুক্ত থাকার প্রচেষ্টা আল জিহাদ।

সর্বোপরি আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দীন কায়েম করার জন্য অর্থাৎ ইকামাতুদ্ দীন-এর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো আল জিহাদ।

ইকামাতুদ দীনের জন্য পরিচালিত আল জিহাদের দুইটি অধ্যায় রয়েছে।

কোন ভূখণ্ডে ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আল জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর সর্ব প্রধান কাজ হচ্ছে আদ-দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ।

আবার কোন ভূখণ্ডে ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত হয়ে যাওয়ার পর আদ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ-র সাথে সমর শক্তিও যুক্ত হয়।

ঈমানের খাঁটিত্ব প্রমাণের উপায় আল জিহাদে আত্মনিয়োগ করা। খাঁটি মুমিনদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা আল হুজুরাতের ১৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ امَنُوْا بِاللهِ وَرَسُولِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ ط اُولَئِكَ هُمُ الصّدِقُوْنَ ০

‘নিশ্চয়ই মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, অতপর কখনো সংশয় সন্দেহে নিপতিত হয় না এবং জিহাদ করে তাদের অর্থ সম্পদ ও জান দিয়ে, আল্লাহর পথে। (ঈমানের দাবিতে) এরাই তো সত্যবাদী।’

সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوْا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصّبِرِيْنَ ০

‘তোমরা কি ভেবেছো যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ আল্লাহ এখনো দেখেন নি যে তোমাদের মধ্য থেকে কারা তাঁর পথে জিহাদ করে এবং দেখেন নি যে কারা (জিহাদে) দৃঢ়তা অবলম্বন করে।’

সূরা মুহাম্মাদ-এর ৩১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ

‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো যাতে তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ এবং কারা দৃঢ়তা অবলম্বনকারী তা জেনে নিতে পারি।’

সূরা আত্ তাওবার-র ১৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

اَمْ حَسِبْتُمْ أَن تُتْرَكُوْا وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جهَدُوْا مِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلاَ رَسُوْلِه وَلاَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَلِيْجَةً ج وَاللهُ خَبِيرٌم بِمَا تَعْمَلُوْنَ ০

‘তোমরা কি ভেবেছো যে তোমাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দেওয়া হবে অথচ আল্লাহ এখনো দেখেন নি যে তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদে নিবেদিত হয় এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরকে ছাড়া আর কাউকে  বন্ধু রূপে গ্রহণ করে না। আর তোমরা যা কিছু কর সেই সম্পর্কে আল্লাহ খবর রাখেন।’

যষ্ঠ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন এটাও সুস্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করছেন যে একজন মুমিন আল জিহাদে আত্ম নিয়োগ করে তার নিজের কল্যাণই নিশ্চিত করে থাকে। এই কথারই প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই সূরা আছ ছাফ-এর ১০-১২ নাম্বার আয়াতে। এই আয়াত গুলোতে মুমিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ০ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُولِه وَتُجَاهِدُونَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ط ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ০ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنّتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الاَنْهرُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِى جَنّتِ عَدْنٍ ط ذلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ০

‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আমি কি তোমাদেরকে এমন ব্যবসার কথা জানিয়ে দেবো যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবে? (তা হচ্ছে : ) তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও জান দিয়ে। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জান। আল্লাহ তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণা প্রবাহিত । এটি চিরস্থায়ী অবস্থানের উত্তম বাসস্থান। আর এটি অতি বড়ো সাফল্য।’

اِنَّ اللهَ لَغَنِىٌّ عَنِ الْعلَمِيْنَ ০

এই ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন এই মহাসত্য প্রকাশ করলেন যে আল জিহাদে আত্মনিয়োগ করা মুমিনদের নিজেদের জন্যই কল্যাণকর। এতে আল্লাহর কোন স্বার্থ নেই।

সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলে আল্লাহর কিছুই যায় আসে না। পক্ষান্তরে সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর আনুগত্য করলেও আল্লাহর শানে কোন বৃদ্ধি ঘটে না। আল্লাহ স্বয়ং সম্পূর্ণ, স্ব-প্রশংসিত, নিরংকুশ অ-মুখাপেক্ষী সত্তা।

উল্লেখ্য যে ঈমানের খাঁটিত্বের প্রমাণ আল জিহাদে আত্মনিয়োগ করেই দিতে হয়।

আল জিহাদে আত্মনিয়োগ করলে পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া অবশ্যম্ভাবী।

পরীক্ষার সম্মুখীন হলে দৃঢ়তা অবলম্বন ঈমানের দাবি।

তবে এই দৃঢ়তা অবলম্বন আল্লাহর অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। সেই জন্য দয়াবান, মেহেরবান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন অন্যান্য বিষয়ের মতো এই বিষয়েও তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করার জন্য আমাদেরকে সূরা আল বাকারা-র শেষ আয়াতে দু‘আ শিখিয়েছেন,

رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا اِنْ نَّسِينَا اَوْ اَخْطَاْنَا ج رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَاج رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ ج وَاعْفُ عَنَّا وقفه وَاغْفِرْ لَنَا وقفه وَارْحَمْنَا وقفه اَنتَ مَوْلاَنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكفِرِيْنَ ০

‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আমাদের ভুল-ত্র“টির জন্য পাকড়াও করবেন না, হে আমাদের রব, পূর্ববর্তীদের বোঝার মতো (পরীক্ষা) বোঝা (পরীক্ষা) আমাদের ওপর চাপাবেন না। হে আমাদের রব, বহন করার ক্ষমতা নেই এমন বোঝা আমাদের ওপর চাপাবেন না। আমাদের গুনাহগুলো মিটিয়ে দিন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন; আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। আপনি আমাদের পৃষ্ঠপোষক, অতএব আপনি আমাদেরকে কাফির গোষ্ঠীর মুকাবিলায় সাহায্য করুন।’


শিক্ষাঃ

১. প্রকৃত মুমিনদেরকে অবশ্যই নানাভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়।

২. পরীক্ষার সম্মুখীন হলে তাদের কর্তব্য চিন্তায় ও কর্মে দীনের ওপর অটল অবিচল থাকা।

৩. ইসলাম-বিদ্বেষীরা শেষাবধি-আল্লাহর হাতে বন্দী হয়। আর মুমিনগণ স-সম্মানে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে যায়।

৪. আল্লাহর পথে জিহাদ আখিরাতের সফলতা নিশ্চিত করে।

আর আখিরাতের সফলতাই তো প্রকৃত সফলতা।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu