• ‘রমজান’ শব্দটি আসছে “রমজ” ধাতু থেকে, যার অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া, পুড়ে ভস্মীভূত করা, Burn into ashes.
অর্থাৎ এই মাস যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে অতীত জীবনের সব গুনাহ পুড়ে যায়। গুনাহমুক্ত জীবন লাভ করা যায়।
রমজান একমাত্র মাস যার নাম কুরআনে এসেছে। আর কোন মাসের এভাবে নাম পাওয়া যায় না।
• এই মাস এতই গুরত্বপূর্ণ যে এই মাস আসার ২ মাস আগ থেকে রাসুল সঃ দোয়া করতেন। (আল্লাহুমা বারিকলানা ফি রজবা ও শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাদান)
-সালামান ফারসী রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা.
বলেছেন, “ইয়া আইয়ুহান্নাস ক্বদ জাল্লাকুম মিন শাহারুন আজীম” (হে মানুষেরা
তোমাদের জন্য এক মহান বুজুর্গ মাস আসছে)
– এই রমজানের বিশেষ ছাড়
সম্পর্কে রাসুল সা. বলেন, ইযা কানা রমাদান ফাতাহাত আবওয়াবুর রহমাহ, ও
খুল্লিকাত আবওয়াবু জাহান্নাম, ও ছুলছিলাতুশ শায়াতিন (এই সময় রহমাতে তথা
জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়
আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়)
• এ মাসে রয়েছে তিনটি ভাগঃ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত।
একটি
কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য যেমনিভাবে কাপড় ভিজাতে হয়,
সাবান/ডিটারজেন্ট দিয়ে ময়লা বের করা হয় এবং সর্বশেষ পানি দিয়ে ধুয়ে
পরিষ্কার করতে হয়।
তেমনি এই মাসের ১ম দশকে নিজের অন্তরকে আল্লাহ রহমতের পানিতে ভিজিয়ে, ২য় দশকে মাগফিরাত লাভের মাধ্যমে অন্তর থেকে গুনাহের ময়লা বের করে, ৩য় দশকের নাজাত লাভের মাধ্যমে নিজেকে গুনাহমুক্ত করার সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন।
• এই মাসে আমাদের জন্য শুধু রোযা ফরজ নয়, পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও ফরজ ছিল।
-আল্লাহ তায়ালা বলেন, “কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম, কামা কুতিবা আলাল্লাযিনা মিন কাবলিকুম” (বাকারাঃ ১৮৩)
বিভিন্ন তাফসীর থেকে তা জানা যায়। যেমনঃ -আদম আঃ এর যুগ থেকে রোযা ফরজ হয় (মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী: তাফসীরে ওসমানী)
-নুহ আঃ এর যুগে প্রতি মাসের ৩ দিন (১৩,১৪,১৫) রোযা ফরজ ছিল রোযা ফরজ ছিল (তাফসীর ইবনে কাসীর)
-মুসা আঃ এর যুগে ৪০ দিন (যিলক্বদ মাসের ৩০দিন+যিলহজ্জ মাসের ১০ দিন) রোযা ফরজ ছিল (তাফসীর ইবনে আব্বাস)
-ইব্রাহিম আঃ এর যুগে ৩০দিন রোযা রাখা হতো (তাফসীরে তাবারী)
-দাউদ আঃ এর যুগে ১দিন বাদে ১দিন রোযা ছিল (আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.)
-ইদ্রিস আঃ সারা জীবন রোযা রেখেছেন (আল্লামা নিশাপুরী, গ্রন্থঃ আল আরাইশ)
–
এমনকি এখনো ইহুদীরা বছরে একটি রোযা (আশুরা), খ্রিস্টানরা কয়েক ঘন্টার
বিভিন্ন ধরণের রোযার সংস্কৃতি পালন করে, হিন্দুরাও উপোস পালন করে থাকে।
• এটি হলো কিতাব নাযিলের মাস। শুধু কুরআন নয়, প্রায় সকল কিতাব এ মাসে নাযিল হয়েছে যেমনঃ
১ম রমজানে ইব্রাহিমের ছহিফা নাযিল হয়, ৬ষ্ঠ রমজানে তাওরাত নাযিল হয়, ১৩
রমজানে ইঞ্জিল নাযিল হয় এবং ২৩ রমজান অর্থাৎ কদরের রাতে কুরআন নাযিল হয়
(মুসনাদে আহমদ)
-শাহারু রমাদানাল্লাযি উনযিলা ফিহিল কুরআন (বাকারাঃ ১৮৫)
-ইন্না আনযালহু ফি লাইলাতিল কদর (কদরঃ ১)
-এ মাসের বুজুর্গি আল্লাহ কুরআন দিয়ে বর্ণনা করেছেন (এ যেনো কস্তুরি পাওয়া হরিণের মত)
-কুরআন বুঝে সে অনুসারে জীবন গঠন করা।
• এ মাসে রোযা রাখার মাধ্যমে নফস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
-কারন
নফসের গোলামেরা আল্লাহর গোলাম হতে পারে না (ও আম্মামান খাফা মাকামা
রাব্বিহি ও নাহান নাফসা আনিল হাওয়া ফাইন্নাল জান্নাতা হিয়াল মাওয়া)
-মানুষের
নফসের কুমন্ত্রণা গুনাহ বৃদ্ধি করে [হযরত ওমর বলেনঃ আন নাফসু হাওয়াহু
বাহারুজ জুনুব (নফসের কুমন্ত্রণা গুনাহের সমুদ্র তৈরি করে)]
-নফসের কুমন্ত্রণা তিনটিঃ খাওয়া-দাওয়া, আরাম-আয়েশ, জৈবিক চাহিদা
(এ তিনটিই নিয়ন্ত্রণ হয় রোযা রাখার মাধ্যমে)
-মনোবিজ্ঞান
বলে, কোন অভ্যাস ছাড়তে বা নতুন অভ্যাস তৈরি হতে ৩০ দিন লাগে। এজন্য
রমজানের ৩০ দিনের কর্মপরিকল্পনা মাফিক কাজ বিশেষ গুরত্বপূর্ণ।
• এই মাসের প্রত্যেকটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-রাসুল সা. বলেন,
“ইন্নাল্লাহা ফারাদাত আলাইকুমুস সিয়াম ও জানানতু লাকুম কিয়ামা” (নিশ্চয়
আল্লাহ রমজান মানে রোযা ফরজ করেছেন আর আমি তোমাদের রাতে কিয়ামুল লাইলের
নির্দেশ দিচ্ছি)
-রাসুল আরো বলেন, “মান সমাহু ও কামাহু ঈমানাও ও
ইহতেসাবা খারাজা মিন জুনুবি কাওয়ামি ওলাদাতহু উম্মুহু” (যারা এই মাসে সিয়াম
ও কিয়াম ঈমান ও ইহতেসাব বা আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে পালন করে তাদেরকে
আল্লাহ এভাবে গুনাহমুক্ত করে যেনো তারা সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত হয়ে যায়)
-একই বর্ণনা অন্য হাদিসে এসেছে এভাবে, “মান সমা রমজানা ঈমানাও ও ইহতেসাবান গোফারালাগু মা তাকাদ্দামা মিন জামবিক”
-এ মাসের একেকটি সুন্নত ফরজের সমান, একেকটি ফরজ ৭০ ফরজের সমান (হাদিস)
-তাই
এ মাসে বেশি না ঘুমিয়ে সময়কে কাজে লাগানো দরকার (অর্থসহ তেলাওয়াত, তাফসীর,
আয়াত-হাদীস ও সুরা মুখস্ত, সীরাত ও ফিকাহ অধ্যয়নের মাধামে)
-আল্লাহর কাছে চাইতে পারলে অবশ্যই পাওয়া যাবে।
এজন্য কবি বলেন,
“রহমের বৃষ্টি ঝরা ক্ষণ এলো,
থেকো না আর ঘুমিয়ে চোখ মেলো।”
উর্দু কবি আল্লামা ইকবাল বলেন,
“বার গারিকি বাহরে রদর কুজায়ে’
চান্দে গুঞ্জত কিসমতে এক রুজায়ে।”
-এ মাসকে যারা কাজে লাগাতে পারলো না তারা সবচেয়ে বেশি হতভাগ্য [বায়ুদা মান আদরাকা রমাদান ছুম্মান সালাখা আইয়া গোফারালাহু, ক্বলা আমিন (হাদীসে জিবরিল)]
• রমজানের শিক্ষাই হলোঃ
-আল্লাহ ভয় তৈরি হওয়া (লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন)
-সবই আল্লাহর সিদ্ধান্তে করতে হবে (হালাল জিনিস যেভাবে আল্লাহ দিনের বেলা গ্রহন করা হারাম করেছেন তার মানে এসবের মালিক আমরা নয়)
-ক্ষুধার্তদের কষ্ট বুঝতে পারা (কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে ধ্বংসে নি যারে)
-বাকি ১১ মাস একই প্র্যাকটিস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
-এ মাসে নিজের নতুন করে গড়ে তোলা (রমজান স্রেফ রোযা সে নেহি, ইয়ে ছোট ছোট আচ্ছা সেভি বানায়ে জাতা)
-যাবতীয় খারাপ থেকে বাঁচা।
কবি বলেন,
“মিথ্যা বলা চাড়লো না যে,
সত্য বলতে পারল না যে।
কি লাভ বলো রোযা রেখ তার,
সারাটা দিন রোযাদারের মত বান করার।
0 Comments