আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রাঃ বর্ণিত দায়িত্বের জবাবদিহিতা সংক্রান্ত হাদিস
حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ، مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَمُرَةَ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم “ يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ، فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِنْ أُوتِيتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا، وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا، فَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ، وَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ
অনুবাদঃ আবদুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী করিম সা. বললেনঃ হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কেননা, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেয়া হবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এর জন্য সাহায্য করা হবে। কোন কিছুর ব্যাপারে যদি কসম কর আর তা ব্যতীত অন্য কিছুর মাঝে কল্যাণ দেখতে পাও তবে স্বীয় কসমের কাফফারা আদায় করে তার চেয়ে উত্তমটি অবলম্বন কর।
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী
অধ্যায়ঃ ৭১ (শপথ ও মানত)
পরিচ্ছেদঃ তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না
হাদিস নং-৬১৬৯
অধ্যায়ঃ ৭২ (শপথের কাফফারা)
পরিচ্ছেদঃ ২৭৯০. কসম ভঙ্গ করার পূর্বে এবং পরে কাফফারা আদায় করা
হাদিস নং-৬২৬৭
অধ্যায়ঃ আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ৩০০৯. যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছে নেতৃত্ব চায় না, তাকে মহান আল্লাহ্ তা’আলা সাহায্য করেন
হাদিস নং-৬৬৬১
অধ্যায়ঃ আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ৩০১০. যে ব্যক্তি নেতৃত্ব চায়, তা তার উপরই ন্যস্ত করা হয়
হাদিস নং-৬৬৬২
রাবী পরিচিতিঃ
পুরো নাম:
সামুরা ইবনে জুনদুব ইবনে হিলাল ইবনে হারীজ ইবনে মুররাহ ইবনে হাযন ইবনে আমর ইবনে জাবের ইবনে জিররিয়াসাতইন আল-ফাযারী
তাঁর কুনিয়ত:
আব্দুর রহমান, আবু সাঈদ, আবু সোলাইমান, আবু আব্দুল্লাহ, আবু মুহাম্মদ।
তাঁর বেড়ে ওঠা:
-আনসার গৃহে বেড়ে ওঠেন
-তার পিতা তিনি শিশু অবস্থায় থাকতে মারা যান
-তার
মা ছিলেন একজন সুন্দরী নারী, তিনি মদীনায় আগমন করলে অনেকেই তাঁকে বিবাহের
প্রস্তাব দেন। তিনি তাদের উত্তরে বলতেন, তিনি এমন একজন পুরুষকে বিবাহ করবেন
যিনি তার পুত্র সামুরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের
দায়িত্বগ্রহণ করবেন। তখন এক আনসারী ব্যক্তি ঐ শর্তের উপর তাকে বিবাহ করেন।
ফলত তাঁরা আনসার গৃহে একত্রে বসবাস করেন।
-সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু শৈশব থেকেই ছিলেন জিহাদ পাগল
-রাসূলুল্লাহ
সা. তাঁকে উহুদ যুদ্ধের সময় অনুমতি দেন ফলে তিনি উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ
করেন। এছাড়া রাসূলের সাথে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
-আল্লাহ তাকে এক
আশ্চর্য মুখস্তশক্তি ও অনন্য প্রতিভা দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। যেসব সাহাবী
রাসূলুল্লাহ সা. থেকে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেছেন তিনি তাদের অন্যতম।
-তিনি
রাসূলুল্লাহ সা. এর সময়কালে বালক ছিলেন এবং সরাসরি তার থেকে হাদীস মুখস্ত
করতেন। সহীহ হাদীসগ্রন্থগুলোতে তার ৬৬টি হাদিস পাওয়া যায়।
-ইন্তিকাল ও এর কারণ: ৫৮ হিজরীতে বসরা নগরীতে মুআবিয়া রাঃ এর খিলাফত
আমলে তাঁর ইন্তিকাল হয়েছিল। তিনি গরম পানি ভর্তি ডেকের মধ্যে পড়ে যান। তিনি
ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত ছিলেন বিধায় উক্ত ডেকের উপর বসে ধনুষ্টংকারের
চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। তিনি ঐ ডেকের মধ্যে পড়ে যান এবং সেখানেই ইন্তিকাল
করেন।
-তাঁর এ মৃত্যুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
ভবিষ্যৎবাণী সত্য হয়। একদিন তিনি, আবু হুরায়রা (রা.) ও অন্য একজন সাহাবী
একত্রে ছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
তোমাদের মধ্যকার সর্বশেষ ব্যক্তি আগুনে পতিত হবে।
-সামুরা কঠিন
ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত ছিলেন। কোন ভাবেই তিনি তা প্রতিরোধ করতে পারছিলেন না।
ফলে তিনি একটি বিরাট ডেক এনে তাতে পানি ভর্তি করে নিচে আগুন জ্বালানোর
নির্দেশ দিলেন এবং তিনি ডেকের উপর বসার স্থান তৈরী করলেন। আগুনের ধোঁয়া
তাঁর কাছে পৌঁছালে রোগের উপশম হত। এভাবে থাকা অবস্থায় তিনি নিচে পড়ে যান। এ
কারণে ধারণা করা হয় ঐ হাদিসটি তাঁর সম্পর্কেই বলা হয়েছে।
গ্রন্থ ও গ্রন্থাকার পরিচিতিঃ
-ইমাম বুখারি র.
-তাঁর নাম মুহাম্মদ
-উপনামঃ আবু আব্দুল্লাহ
-উপাধিঃ আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদীস।
-বুখারা নামক স্থানে জন্মস্থান বলে তাকে বুখারী বলা হয়।
-ইমাম বুখারীর (র) পূর্ণনাম- ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল বুখারী (র)।
-তিনি ১৩ই শাওয়াল শুক্রবার, ১৯৪ হিজরিতে (৮১০ খ্রিষ্টাব্দ) খোরাসানের বুখারাতে (বর্তমানে উজবেকিস্তানের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন।
-তাঁর বাবার নাম ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম ছিলেন একজন হাদীসবিদ।
-তিনি হাদীস শাস্ত্রবিদ আল্লামা হাম্মাদ (র.) এবং হযরত ইমাম মালেকের (র) এর শাগরিদ ছিলেন।
-এছাড়াও বিখ্যাত মনীষী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের (র)* এর শাগরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।
-ইমাম বুখারী (র) এর শিক্ষা, জ্ঞান ও যোগ্যতা শুধু পিতার দিক থেকেই পাননি; বরং মাতার দিক থেকেও অর্জন করেছিলেন।
-ইমাম বুখারীর (র) এর মাতা ছিলেন বিদূষী ও মহীয়সী মহিলা। নেককার মহিলা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
-ইমাম
বুখারী (র) একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ রোগের প্রভাবে তার দুই
চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে যায়। স্নেহময়ী মাতা পুত্রের চোখের আলোর পুনঃপ্রাপ্তির
জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন এবং মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে প্রার্থনা করতে
থাকেন। এক পর্যায়ে এক রাত্রে স্বপ্নে তিনি হযরত ইবরাহিমকে (আ) তাঁর শিয়রে
বসা অবস্থায় দেখতে পেলেন। হযরত ইবরাহিম (আ) তাকে বলেন, তোমার প্রার্থনা
আল্লাহ্ পাক কবুল করেছেন। তাঁর দয়ার বরকতে তোমার পুত্র চোখের আলো ফিরে
পেয়েছে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে তার পুত্র ইমাম বুখারী (র.) বলে উঠলেন,
আম্মা! আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছি।
-ইমাম বুখারী (র) শৈশবেই বাবাকে হারান, ফলে মায়ের কাছে প্রতিপালিত হন।
-ইমাম
বুখারীর (র) বাল্যকাল থেকেই শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। ইমাম
বুখারী (র) প্রথমে কুরআন শিক্ষা শুরু করেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি কুরআন
মুখস্থ করেন
-১০ বছর বয়স থেকে তিনি হাদীস মুখস্থ করা শুরু করেন।
-১৬ বছর বয়সেই তিনি “আবদুল্লাহ বিন মুবারক” এবং “ওয়াকীর পান্ডুলিপিসমূহ” মুখস্থ করে ফেলেন।
-১৮ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমন করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীসের চর্চা শুরু করেন।
-তিনি এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন।
-সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীসের হাফেয ছিলেন।
-যে কোনো কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্থ করে ফেলতে পারতেন।
-একদা
ইমাম দাখেলি (র) একটি হাদিসের সনদ বর্ণনা করার সময় ‘জুবাইর’ -এর স্থলে
‘আবু জুবাইর’ বলেছেন। ইমাম বুখারী নম্রস্বরে বললেন- এখানে আবু জুবাইর’ -এর
স্থলে ‘জুবাইর’ হবে। অতঃপর ইমাম দাখেলি (র) বাড়িতে গিয়ে কিতাব দেখে তার ভুল
সংশোধন করেছেন। এর অব্যবহিত পরই দাখেলি (র) তাকে খুব স্নেহ করতেন।
-দরস
চলাকালে উনার সহপাঠীগণ হাদীসগুলো লিখে নিতেন। তিনি তা লিখতেন না। তার
সহপাঠীগণ তাকে হাদীস না লিখে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেননি।
অতঃপর সহপাঠীগণ তাকে হাদীস লেখার জন্য জোর তাগিদ দিলে তিনি উত্তর দিলেন-
“আপনাদের লেখা কপিগুলো নিয়ে আসুন। তারা কপিগুলো নিয়ে আসলে তিনি
ধারাবাহিকভাবে তাদের সামনে হাদীসগুলো পাঠ করে শোনান। সেই মজলিসে তাদের লেখা
অনুসারে প্রায় পনের হাজার (১৫,০০০) হাদীস মুখস্থ পাঠ করে শোনান।
-ইমাম বুখারী (র) বলেন, আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীস ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীস মুখস্থ রয়েছে।
-মুহাদ্দিস ইবনে খুযায়মা (র) বলেন, পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীসের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করেননি।
ইমাম বুখারীর (র.) অমূল্য সৃষ্টি সহিহ বুখারী: ইমাম বুখারী রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি।
-তার রচিত গ্রন্থাবলির মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো সহিহ বুখারী।
-ইমাম বুখারীর জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম হচ্ছে এই হাদীসগ্রন্থের রচনা।
-তিনি স্বীয় শিক্ষক ইসহাক বিন রাহওয়াই থেকে এই গ্রন্থ রচনার প্রেরণা লাভ করেন।
-একদিন
ইসহাক এমন একটি গ্রন্থের আশা প্রকাশ করেন, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে শুধু সহিহ
হাদীস। ছাত্রদের মাঝে ইমাম বুখারী তখন এই কঠিন কাজে অগ্রসর হন।
-২১৭ হিজরি সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি মক্কার হারাম শরীফে এই গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন।
-দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৩ হিজরি সনে এর সংকলনের কাজ সমাপ্ত হয়।
-বুখারী শরীফের সংকলনকালে তিনি সর্বদা রোযা রাখতেন
-প্রতিটি
হাদীস সন্নিবেশিত করার আগে গোসল করে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মুরাকাবা
ও ধ্যানের মাধ্যমে হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন।
-এই
গ্রন্থে তিনি সকল সহীহ হাদীস সংকলন করেননি; বরং সহীহ হাদীসের মাঝে যেগুলো
তার নির্ধারিত শর্তে উন্নীত হয়েছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন।
-তিনি স্বয়ং বলেন, “আমি জামে কিতাবে সহীহ হাদীস ব্যতিত অন্যকোনো হাদীস উল্লেখ করিনি।
-তবে কলেবর বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক সহীহ হাদীসকে বাদ দিয়েছি।
-বুখারী শরীফের পুরো নাম হলো- আল জামি আস সহীহ আল মুসনাদ মিন উমুরি রাসুলিল্লাহ (স) ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি।
-ইমাম বুখারী (র) বলেছেন, আমি আমার সহীহ বুখারী সঙ্গে নিয়ে বসরা শহরে ৫ বছর অবস্থান করেছি এবং আমার কিতাব প্রণয়নের কাজ শেষ করি।
-আর প্রতি বছরই হজ্জ পালন করি এবং মক্কা হতে বসরাতে ফিরে আসি।
-তিনি ৬ লাখ হাদীস হতে যাচাই বাছাই করে সর্বসাকুল্যে ১৬ বছর নিরলস সাধনা করে এ প্রসিদ্ধ গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেন।
-এখানে মোট হাদীস আছে সাত হাজার একশত পঁচাত্তর খানি (৭,১৭৫)।
-আর পুনরুক্ত ছাড়া আছে প্রায় চার হাজারের (৪,০০০)।
-আর কারো মতে, বুখারীতে পুনরুক্ত হাদীস আছে মাত্র একখানি যা রুমালের বর্ণনা।
-বিশ্বের সকল মুসলমানদের কাছে পবিত্র আল কুরআনের পরেই বুখারী শরীফের স্থান
-ইমাম বুখারীর শেষ জীবন খুব সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত হয়নি।
-যুগ
শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসাবে যখন ইমাম বুখারীর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে
ছড়িয়ে পড়ল তখন বুখারার আমির স্বীয় ইমাম বুখারীকে রাজ দরবারে এসে
সন্তানদেরকে সহীহ বুখারী পড়ানোর জন্য প্রস্তাব করলো।
-ইমাম বুখারী তার
মসজিদ ও সাধারণ লোকদেরকে ছেড়ে দিয়ে রাজ দরবারে গিয়ে আলাদাভাবে আমিরের
ছেলেদেরকে বুখারী পড়ানোকে ইলমে হাদীসের জন্য বিরাট অবমাননাকর ভেবে প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করলেন।
-তিনি পরিষ্কার বললেন, আমির যদি সত্যিকার অর্থে
ইলমে হাদীসের প্রতি অনুরাগী হন, তাহলে তিনি যেন তার সন্তানদেরকে আমার
পাঠ্যস্থান মসজিদে পাঠান।
-এতে আমির ইমাম বুখারীর প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন
-বুখারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার জন্য আমিরের নিজস্ব কিছু আলেম ঠিক করলেন।
-আমিরের আদেশ এবং ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তিনি জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করে নিশাপুরে চলে যান।
-নিশাপুরেও অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলে পরিশেষে সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে যান।
-বুখারা
থেকে বের হওয়ার সময় ইমাম আল্লাহর কাছে এই দুআ করেন যে, হে আল্লাহ্! সে
আমাকে যেভাবে অপমান করে বের করে দিলো তুমিও তাকে অনুরূপ লাঞ্চিত করো।
-মাত্র এক মাস পার হওয়ার পূর্বেই খুরাসানের আমির খালেদ বিন আহমাদের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাকে ক্ষমতা ছাড়া করলো।
-পরবর্তীতে
২৫৬ হিজরির, ১লা শাওয়াল মোতাবেক ৩১শে আগস্ট, ৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের শুক্রবার
দিবাগত রাতে বাগদাদের জেলে থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
-পরদিন শনিবার যোহরের নামাজের পর খরতঙ্গেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
-মৃত্যুর পর তার কবর থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হয়।
ব্যাখ্যাঃ
-রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা
প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে।’ (সহিহ বুখারি এবং মুসলিম) জবাবদিহিতার কারণে ইসলামের সৌন্দর্য শুধু
নয় বরং তার গ্রহণযোগ্যতাও হয়েছে সবার কাছে।
-আল্লাহ আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করেননি। পবিত্র কুরআনের দু’টি আয়াতে সরাসরি এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তা হলো
১. আমাদেরকে খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে (সূরা আল-বাকারাহ, ২: ৩০)
২. আল্লাহর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা আল-যারিয়াত, ৫৬:৫১)
-আর তাই এই দুনিয়ার প্রত্যেকটি কাজের জবাবদিহি করতে হবে আমাদের। (সূরা আল-হাশর, ৫৯:১৮)
-আমাদের সব কাজের বিবরণ আল্লাহ নিজেই সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছেন (সূরা ইনফিতর, ৮২: ১০-১২)
-বিচারের দিন আমাদের তা পাঠ করার জন্য বলা হবে। (সূরা ইসরা, ১৭:১৪)
-ভালো কিংবা মন্দ সব কাজেরই বিনিময় দেয়া হবে এই দিনে। (সূরা ইসরা, ১৭:১৫)
-কোনো
কিছুই; সম্পত্তি কিংবা ব্যক্তি সে দিন কারো কোনো কাজে আসবে না ব্যক্তির
আমল ছাড়া আর আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। (সূরা ইনফিতর :
৮২:১৯)
-ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যক্তির জবাবদিহিতা দুইভাবে বিবেচিত হবে।
১. এই দুনিয়াতে তাকে জবাবদিহি করতে হবে
২. আখেরাতের বিচারের দিবসে।
-রাসূলুল্লাহ
সা: বলেছেন, কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কেউ এক
কদমও সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। ১. কিভাবে সে তার জীবনকে অতিবাহিত করেছে?
২. তার যৌবনকে সে কিভাবে ব্যয় করেছে? ৩. সে কিভাবে অর্থ সম্পত্তি আয় করেছে?
৪. অর্জিত অর্থ সম্পত্তি কোন পথে ব্যয় করেছে? এবং ৫. সে তার জ্ঞানের আলোকে
কী করেছে? (সুনানু তিরমিজি)
-পাঁচটি বিষয়ের আগে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব
দাও। ১. বৃদ্ধ হওয়ার আগে তোমার যৌবনকে, ২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে, ৩.
দারিদ্র্যতার আগে সচ্ছলতাকে, ৪. ব্যস্ততার আগে অবসর সময়কে এবং ৫. মৃত্যুর
আগে জীবনকে। (সুনানু আহমদ)
-সেদিন ‘যার ওজনের পাল্লা হালকা হবে’, ‘তার ঠিকানা হবে ‘হাবিয়াহ’। ‘তুমি কি জানো তা কি?’ ‘প্রজ্বলিত অগ্নি’ (ক্বারিআহ ১০১/৮-১১)।
বস্তুতঃ ক্বিয়ামতের দিন ওযনের পাল্লা হালকা হওয়ার ভয়েই হযরত ওমর (রাঃ)
স্বীয় খেলাফতকালে বলতে গেলে ঘুমাতেন না। তিনি বলতেন, যদি আমি রাতে ঘুমাই,
তাহ’লে আমি নিজেকে ধ্বংস করলাম। আর যদি দিনে ঘুমাই, তাহ’লে প্রজাদের ধ্বংস
করলাম। কেননা আমি তাদের উপর দায়িত্বশীল
-উমাইয়া খলীফা ওমর বিন আব্দুল
আযীয (৯৯-১০১ হি.) রাতের বেলা মোটা মোমবাতি জ্বেলে কর্মকর্তাদের ডেকে
প্রজাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হচ্ছিলেন। এমন সময় একজন বলে উঠল, হে আমীরুল
মুমিনীন! আপনার নিজের অবস্থা ও পরিবারের অবস্থা কেমন? তখন খলীফা ফুঁ দিয়ে
বড় মোমবাতিটি নিভিয়ে দিলেন এবং গোলামকে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বললেন, চেরাগ নিয়ে
আসার জন্য। কিছুক্ষণ পরে চেরাগ এল, যা নিবু নিবু আলোয় জ্বলছিল। এবার তিনি
বললেন, তুমি এখন যা খুশী আমাকে প্রশ্ন কর। অতঃপর তিনি তার প্রশ্ন সমূহের
উত্তর দিলেন।
-জবাবদিহিতার অনুভূতি ও দায়িত্বানুভূতির তীব্রতা মুসলিম
নেতাদের মধ্যে কেমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর
একটি ঘটনা থেকেই বুঝা যায়। একদিন তিনি প্রচন্ড সূর্যতাপে ছাদাক্বার উটের
পরিচর্যা করছিলেন। এমন সময় বনু তামীমের নেতা আহনাফ বিন ক্বায়েস ইরাক থেকে
একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আসেন। যখন তারা নিকটবর্তী হ’লেন, তখন খলীফা ওমর
আহনাফকে ডেকে বললেন, হে আহনাফ! কাপড়-চোপড় ছেড়ে দ্রুত এস এবং এই উট
পরিচর্যার ব্যাপারে আমীরুল মুমিনীনকে সাহায্য কর। কেননা এগুলি ছাদাক্বার
উট। এর মধ্যে ইয়াতীম-মিসকীন ও বিধবাদের হক রয়েছে। তখন একজন বলল, হে আমীরুল
মুমিনীন! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি ছাদাক্বা খাতের কোন একজন গোলামকে এ
কাজের নির্দেশ দিলেই তো যথেষ্ট ছিল। জবাবে ওমর (রাঃ) বললেন, আমার চাইতে ও
আহনাফের চাইতে বড় গোলাম আর কে আছে? কেননা যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন
দায়িত্বে থাকে তার উপরে ঐরূপভাবে দায়িত্ব পালন করা ওয়াজিব, যেভাবে একজন
মনিবের প্রতি গোলামের দায়িত্ব পালন করা ওয়াজিব’ (ইবনুল জাওযী, তারীখু ওমর ৮৯ পৃ.)।
-আববাসীয়
খলীফা মুক্তাদী বি আমরিল্লাহ (৪৬৭-৪৮৭ হি.)-এর মন্ত্রী আবু শুজা‘-এর নিকটে
জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, আমাদের প্রতিবেশী একজন বিধবা আছেন, যার চারটি
সন্তান রয়েছে। যারা নগ্ন দেহ ও ক্ষুধার্ত। কথাটি শোনার সাথে সাথে মন্ত্রী
একজন লোক দিয়ে খাদ্য, বস্ত্র ও কিছু নগদ অর্থ পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর প্রচন্ড
শীতে নিজের দেহের পোষাক খুলে রেখে দিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এই
পোষাক পরবো না, যতক্ষণ না এই ব্যক্তি আমার নিকট তাদের খবর নিয়ে আসে’। লোকটি
ছুটে চলে গেল এবং দায়িত্ব পালন করে ফিরে এসে বলল যে, তারা খুবই খুশী হয়েছে
এবং মন্ত্রীর জন্য দো‘আ করেছে। একথা শোনার পর মন্ত্রী পোষাক পরিধান
করলেন’ (আল-বিদায়াহ ১২/১৫০-৫১)
-রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘আল্লাহ কোন বান্দাকে যদি প্রজাদের উপরে দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেন, অতঃপর সে
তাদের উপর খেয়ানতকারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করে, তাহ’লে তার উপর আল্লাহ
জান্নাতকে হারাম করে দেন’ (বুঃ মুঃ)। কেবল শাসকই নন, বরং যেকোন দায়িত্বশীলের জন্য একই হুকুম।
-আবু
মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, দু’ ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে দায়িত্ব
চাইলে তিনি তাদেরকে বললেন, আল্লাহর কসম, আমরা এমন কাউকে কর্মকর্তা নিযুক্ত
করব না, যে দায়িত্ব চায় এবং এমন ব্যক্তিকেও নয়, যে দায়িত্ব লাভের আকাঙ্খা
করে।’
-কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে
প্ররোচিত না করে। সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত :
৮)
-আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে
ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে সম্প্রদায়ের কোনো কাজের দায়িত্বে নিযুক্ত করল এ
অবস্থায় যে, সে জানে, মুসলিমদের মধ্যে এ ব্যক্তির চেয়ে অধিক ভালো কেউ আছে,
যে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ সম্পর্কে আরো বেশি জানে, তাহলে এই নির্বাচক
ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে খেয়ানত করল।’ হাদিস
শরিফে রয়েছে, যখন কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে সোপর্দ করা হয় তখন
কেয়ামতের অপেক্ষা করো।’
-কোরআনে এসেছে, ‘আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব
আল্লাহরই এবং কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট। হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে
তোমাদের অপসারিত করতে এবং অপরকে আনতে পারেন, আল্লাহ এটা করতে পুরোপুরি
সক্ষম।’ (সূরা নিসা, আয়াত :১৩২-১৩৩)
-আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, আমি ও আমার কওমের
দু’ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। সে
দু’জনের একজন বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে (কোন বিষয়ে ) ‘আমীর নিযুক্ত
করুন। অন্যজনও ঐরূপ কথা বলল। তখন তিনি বললেনঃ যারা নেতৃত্ব চায় এবং এর লোভ
করে, আমরা তাদেরকে এ পদে নিয়োগ করি না। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৪)
-আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে, আবূ বাকর (রাঃ) কক্ষনো শপথ ভঙ্গ করেননি, যতক্ষণ না
আল্লাহ্ কসমের কাফ্ফারা সংবলিত আয়াত অবতীর্ণ করেন। তিনি বলতেন, আমি কসম
করি। অতঃপর যদি এর চেয়ে উত্তমটি দেখতে পাই তবে উত্তমটিই করি এবং আমার শপথ
ভাঙ্গার জন্য কাফ্ফারা দেই। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৬১৬৮)
-হাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার কসমের কাফ্ফারা আদায় করি আর যেটি কল্যাণকর সেটি
করি। অথবা বলেছেনঃ যেটি কল্যাণকর সেটি করি এবং আর (কসমের) কাফ্ফারা আদায়
করি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬২)
শপথের কাফফারাঃ
لَا یُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغْوِ فِیْۤ اَیْمَانِكُمْ وَ لٰكِنْ یُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُّمُ الْاَیْمَانَ١ۚ فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسٰكِیْنَ مِنْ اَوْسَطِ مَا تُطْعِمُوْنَ اَهْلِیْكُمْ اَوْ كِسْوَتُهُمْ اَوْ تَحْرِیْرُ رَقَبَةٍ١ؕ فَمَنْ لَّمْ یَجِدْ فَصِیَامُ ثَلٰثَةِ اَیَّامٍ١ؕ ذٰلِكَ كَفَّارَةُ اَیْمَانِكُمْ اِذَا حَلَفْتُمْ١ؕ وَ احْفَظُوْۤا اَیْمَانَكُمْ١ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمْ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তোমরা যে সমস্ত অর্থহীন কসম খেয়ে ফেলো। সে সবের জন্য আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন না। কিন্তু তোমরা জেনে বুঝে যেসব কসম খাও সেগুলোর ওপর তিনি অবশ্যি তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। (এ ধরনের কসম ভেঙে ফেলার) কাফ্ফারা হচ্ছে, দশ জন মিসকিনকে এমন মধ্যম পর্যায়ের আহার দান করো যা তোমরা নিজেদের সন্তানদের খেতে দাও অথবা তাদেরকে কাপড় পরাও বা একটি গোলামকে মুক্ত করে দাও। আর যে ব্যক্তি এর সামর্থ্য রাখে না সে যেন তিন দিন রোযা রাখে। এ হচ্ছে তোমাদের কসমের কাফ্ফারা যখন তোমরা কসম খেয়ে তা ভেঙে ফেলো। তোমাদের কসমসমূহ সংরক্ষণ করো। এভাবে আল্লাহ নিজের বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট করেন, হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে (সূরা: আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৮৯)
শিক্ষাঃ
১. দায়িত্ব চাওয়া ব্যক্তি দায়িত্ব পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হন (৩৪ নং ধারা)
২. দায়িত্ব চেয়ে না নিলে আল্লাহর সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং এ ব্যাপারে জবাবদিহিতা কম থাকে।
৩. দায়িত্ব পাওয়ার পর আর অবহেলা করার সুযোগ নেই।
৪. কাফফারা সাপেক্ষে কসম ভঙ্গ করা যায়।
0 Comments