দাওয়াত মুমিন জীবনের মিশন

 


দাওয়াতের অর্থ কি ?
দাওয়াত শব্দটি আরবি ‘দাওয়াতুন’ থেকে। অর্থ – আহবান, ডাকা, নিমন্ত্রণ ইত্যাদি।
Missionary activity, Missionary work, Propaganda. অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে আহবান করা, অনুপ্রাণিত করা বা ডাকাকে বলা হয় দাওয়াত।

দাওয়াত ২ ধরনেরঃ
১. আল্লাহর দিকে দাওয়াত
২. জাহেলিয়াতের দিকে দাওয়াত
[ইম্মা শাকিরাও…..উদউ ইলা সাবিলি….ওমান দায়া বি দায়াল…..আল্লাজিনা আমানু ইউকাতিলুনা…….ওল্লাজিনা কাফারু ইউকাতিলুনা……]

দাওয়াত ২শ্রেনির মানুষের জন্যঃ
১. বংশগত মুসলিম
২. অমুসলিম

দাওয়াতে ৩টি দফাঃ
১. আল্লাহর দাসত্ব গ্রহন
২. মুনাফেকি ত্যাগ
৩. নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন

৫ দফা কর্মসূচির দাওয়াত অংশের ২ টি দিকঃ
-ইসলামী জ্ঞানার্জনের দাওয়াত
-ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের দাওয়াত

দাওয়াতের গুরুত্বঃ
-ইয়া আইয়ুহান্নাস! হাল বাল্লগতা, ক্বলু নায়াম, ইন্নাকা ক্বাদ বাল্লাগতা…..আল্লাহুম্মা শাহাদ (সালা তামাররা)
ক্বলা, ফাল ইউ বাল্লিগুশ শাহিদাল গায়িবা, ফা রুকবা মুবাল্লিগিনা আও আম সামিয়িন (হতে পারে তোমাদের চেয়েও তারা বেশি একাজে অগ্রসর হবে)

-রাসুলের আগমনের আগে পুরো পৃথিবীর অবস্থা (দাওয়াত যখন সময়ের দাবি ছিল)

-জাফর রা. এর নাজ্জাসীর দরবারে বক্তব্যঃ
আইয়ুহাল মালেক! কুন্না কওমান আলা জাহেলিয়া না’বুদাল আসনাম(আমরা ছিলাম জাহেলিয়াকের অতল তলে মূর্তি পূজা করতাম),   ওলা কুলুল মাইতাতা (আমরা মৃত ভক্ষণ করতাম), ওলা তিয়াল ফাওয়াহেশ (ব্যাবিচারে লিপ্ত ছিলাম), ও নাকতায়ুল আরহাম (আত্মীয়ের হক আদায় করতাম না), ও নাসিউল জাওয়া (প্রতিবেশীর সাথে লড়াই করতাম), ওলা কুলুজ জাওইয়ু মিন্নাজ জইফ (দূর্বলদের সম্পদ আত্মসাৎ করতাম), ফাকুন্না আলা জালিক হাত্তা বায়াসাল্লাহু ইলাইনা রাসুলাম মিন্না (এ অবস্থার মধ্যে আল্লাহ আমাদের থেকে একজন রাসুলকে দাঁড় করিয়ে দিলেন), নারিফু নাসাবাহু ও সিদকাহু ও আমানাতাহু ও আফাফাহু (যার বংশ, সত্যবাদীতা, আমানতদারীতা ও নিষ্কলুষতা সম্পর্কে জানতাম), ফাদায়ানা ইলাল্লাহ (তিনি আমাদের আল্লাহর দিকে ডাক দিলেন)

-রাসুলের দাওয়াত শুরু হলো, “ইয়া আইয়ুহান্নাস কুলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
He call a ‘clarial call’ (জাগানো বা উদ্দীপিত করার জন্য তীক্ষ্ণস্বরের ডাক)
কারন, ইয়া আইয়ুহান্নাস বলার কারো অনুমতি ছিল
-তাব্বাল্লাকা ইয়া মুহাম্মদ, আবি হাজা দাওয়াতেনা? (এজন্যই ডেকেছো?)

-এগুলো আল্লাহ তাকে শিখিয়েছেন, ওমা কুনতা তাদরিমাল কিতাবি আলাল ঈমান
-উল্লিমতুল ইলমি আউয়ালিনা ও আখিরিনি

-মাম্ম আকালা হাজিল আমর ইয়া রাসুলাল্লাহ (কে আপনার সাথে দাওয়াতে ময়দানে প্রথমদিন থেকে আছে?), ক্বলা হুররুন ও আবদুন (একজন গোলাম)

-খাব্বাব ইবনে আরাত রাঃ রাসুলের কাছে এসে বলেন, “আলা তাসতানসিরু লানা, আলা তাদয়ুল্লাহা লানা, কানার রাজুলু ফিমা কাবলাকুম, ইউহ ফাহু লাহুল আরদ, ফাইউজায়ু বিল মিনসার, ফা ইউজায়ু আলা রাসিহি, ফাইউ সাক্কু বি ইসনাইন, ওইমাশাতু বি আমশাতিল হাদীদ, মা দুনা লাহমিহি বি আজমিন ও আসাবিন, ওমা সুদ্দু জালিকা আন দ্বীনি”

-দাওয়াত হলো বিশ্বযুদ্ধের চরমপত্র (পৌত্তলিক, রোমান, পারস্য, ইহুদি, খ্রিস্টান সবাই এই দাওয়াতের বিপক্ষ অবলম্বন করেছিল)

-নবী রাসুলদের দাওয়াত (ওলাকাদ বায়াসনা ফি কুল্লি উম্মাতির রাসুলা আনি বুদুল্লাহা ওজ তানিবুত তাগুত) [সুরা নাহলঃ ৩৬]
[তাগুত কারা?]

-আল্লাহর কাছে সবচেয়ে দামী জিনিস তার দ্বীনের দাওয়াত প্রচার ও প্রসার [তার সামনে সবচেয়ে সম্মানিত রাসুলের রক্তাক্ত হওয়াকর আল্লাহ সহ্য করেছেন] (লা তার ফাউ….তায়েফের কথা ভেবে…..কত ব্যাথা কতভাবে…..খেয়ে না খেয়ে দ্বীন প্রচারে….লাওলা নুজ্জিলা হাজাল…..করদিয়া জঙ্গে….)

-দাওয়াত পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীনকে সর্য উদয় থেকে সূর্য আস্তের দেশে পৌঁছে দিয়েছে (মাগরিব মে ওয়াজিউ মে….)

-দাওয়াত ঐ ভয়ংকর জিনিসের নাম যা গ্রহন না করার কারনে একটি জাতি একটি জনপদ হালাক হয়ে গেছে (আদ, সামুদ, মাদায়েন, দাউদ)

-দাওয়াতের ময়দানে আল্লাহর সহযোগিতার নিদর্শন ছিল আশ্চর্যজনক (আসহাবে কাহাফ, নুহ আঃ এর জাতি) [কাশেজু আসহাবে কাহাফে লুহুরা, হেফজু করদে ইয়াশু কাশতে নুহুরা]

-রাসুলের দাওয়াতের কর্মপন্থাঃ
১. কুম ফাআনজিন (সতর্কতা) [ইন্না আরসালনাকুম….ওআনজির….
২. রব্বাকা ফাকাব্বির (রবের বড়ত্ব)
৩. সিয়াবাকা ফাতাহহির (পবিত্রতা)
৪. লা তামনুন তাসতাকসির (অপবিত্রতা দূর)
৫. রুজজা ফাহজুর (বেশি আশা না করা)
৬. লি রাব্বিকা ফাসবির (সবর)
[সুরা মুদ্দাসিসর]

-দাওয়াত দানের উপকারিতাঃ
১) নিজের পরিশুদ্ধি ঘটে
২) জ্ঞান বৃদ্ধি পায়
৩) দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদাবান হবেন
৪) সদকায়ে জারিয়া

-দাওয়াতী কাজ আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরজ
-দাওয়াত সর্বোত্তম কাজ (ও মান আহসানু…)
-মানা কানা মুসতান্না ফাল ইয়াস তান্না বিমান কাদেমা, ফাইন্নাল হাইয়ালা তুমানু….

-দাওয়াত ছড়িয়েছে যেখানে নির্যাতন বেশি হয়েছে (বেলালের আহাদ শব্দ)
-দাওয়াতের উপর জুলুম একটি ভয়ংকর দাওয়াত

-দাওয়াত দানকারীর বৈশিষ্ট্য:
১. দায়ীকে হেকমাত অবলম্বন করা
২. উত্তম উপদেশ বর্ণনার অধিকারী হওয়া
৩. দায়ীকে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দাওয়াত উপস্থাপনের যোগ্য হওয়া
৪. দায়ীকে চরম ধৈর্যশীল হওয়া
৫. দায়ীকে কথা ও কাজের মিল রাখা
৬. দায়ীকে জ্ঞানগত দিকে শ্রেষ্ঠ হওয়া
৭. ব্যক্তির মন মানসিকতা ও অবস্থার প্রতি নজর
৮. দাওয়াতকে সহজ রূপে দাওয়াত পেশকারী হওয়া
৯. আদর্শের পুর্নাঙ্গ জ্ঞান এবং সে অনুযায়ী চরিত্র ও কর্ম থাকা
১০. দাওয়াতী কাজের টার্গেট থাকবে একটাই-‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন’
১১. কঠোর পরিশ্রমী হবেন
১২. উদার মনের তথা বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হবেন
১৩. সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা
১৪. চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা, কম কথা বলা ও কৃত্রিমতা পরিহার করা
১৫. ভাষা সহজ সরল, যুক্তি ভিত্তিক ও সুন্দর হওয়া (ইব্রাহিম আঃ মুর্তি ভাঙ্গা)
১৬. দায়ীর কথা ইতিবাচক হবে; নেতিবাচক নয়
১৭. কারো বিরুদ্ধে কথা না বলা।
১৮. মন-মানসিকতা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলা।
১৯. তাড়া-হুড়ো পরিহার করা।

ইতিহাসের পাতায় দাওয়াত গ্রহণের ভিন্ন ভিন্ন উপায়/কৌশলের দৃষ্টান্ত:
১. খাদিজাতুল কুবরার (রা.) প্রথম দাওয়াত গ্রহণকারীনী
২. হযরত আবু বকর (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ: নবীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
৩. হযরত উমর ফারুক (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ : যখন তিনি ছিলেন বোন ও ভগ্নিপতিকে আঘাতকারী
৪. হযরত আমীর হামযা (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ: যখন তিনি বংশীয় অহমিকায় খোঁচা খান
৫. হযরত আলী (রা:) বনাম ইয়াহুদী: যখন ইয়াহুদীটি ছিল যুদ্ধে পরাভূত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখী
৬. বাদশাহ নাজ্জাশী: জাফর ইবনে আবু তালিবের (রা:) সত্য বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে
৭. হযরত বেলাল ও হযরত খাব্বাব (রা:) : গোলাম থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন।
৮. হযরত আবু সুফিয়ান : বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন।
৯. Armstrong মুসলিম হন- চাঁদের ফাটল দেখে
১০. ড. ইসলামূল হক- তুলনামূলক ধর্মচর্চা করতে গিয়ে
১১. ড. মরিস বুকাইলী – কুরআনের ত্রুটি খুঁজতে গিয়ে
১২. মোহা: আলী ক্লে- ইসলামে সাম্যতা দেখে
১৩. মরিয়ম জামিলা- পত্রের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তরে
১৪. ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানা- বন্ধুর সান্নিধ্যে

দাওয়াত গ্রহণকারীর মন জয় করার ৬টি বিশেষ পদ্ধতি:
১. দাওয়াত গ্রহণকারীর সামনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলুন বা ভালভাবে উপস্থাপন করুন।
২. মানুষের নাম তার নিজের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তাই যথাসম্ভব মানুষের নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন।
৩. আপনি যাকে দাওয়াত দিবেন তাকে গুরুত্ব দিন ও এটা মন থেকেই করুন।
৪. দাওয়াত গ্রহণকারী যে বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী, সে বিষয়ে আলোচনা করুন।
৫. ভাল শ্রোতা হন, দাওয়াত গ্রহণ কারীকে কথা বলতে দিন।
৬. বিজয়ী তিনিই যিনি কখনও হাল ছাড়েন না।

দাওয়াতী কাজে সফল হওয়ার নয়টি বিশেষ কৌশল:
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
২. লক্ষ্য অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকুন।
৩. কৌশলী হন; কারণ যোগ্যতম ব্যক্তিরাই শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকে।
৪. কোন কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আপনি মনে করেন পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন।
৫. চিন্তা করুন, অবশ্যই ভালো উপায় খুঁজে পাবেন।
৬. আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী, আচার ও আচরণ যেন ইতিবাচক হয়।
৭. সবসময় হাসুন, তাহলে সমগ্র পৃথিবী আপনাকে দেখে হাসবে।
৮. সৃজনশীল ও উদ্যমী হোন।
৯. অন্যকে ভালবাসুন, আপনিও ভালবাসা পাবেন।

রেফারেন্সঃ
হামীম সাজদা-৩৩
নাহল-১২৫,
আলে-ইমরান-১১০, ১০৪
আহযাব-৪৫-৪৬
শুরা-১৫
আরাফ-৫৯, ৭৩, ৮৫, ৬৫
ফাতির-২৪
ইউসুফ-১৫৮
ইব্রাহীম-৫
মুদ্দাচ্ছির-১-৩
বনি-ইসরাঈল-৫৩

 

Post a Comment

0 Comments

Close Menu