ব্যক্তিগত রিপোর্ট; ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনের হাতিয়ার


 

 ✔রিপোর্ট কি?

ইংরেজী Report শব্দের অর্থ প্রতিবেদন বা হিসাব নিকাশ। 

সাধারণভাবে বলা যায়, রিপোর্ট হলো এমন একটি তত্ত্বগত, সুসংহত বিবৃতি যা কোন বক্তব্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনা প্রদান করে।


ব্যক্তিগত রিপোর্ট কি?

ব্যক্তিজীবনকে পর্যালোচনার মাধ্যমে সংশোধন করে কাঙ্খিত মানে পৌঁছানোর জন্য প্রতিদিনের মৌলিক কাজসমূহ একটি নির্দিষ্ট ছকে লিখে রাখার পদ্ধতিই হচ্ছে ব্যক্তিগত রিপোর্ট।

এখানে তিনটি কথাঃ

১. সংশোধন করা (ক্বদ আফলাহা মান তাজাক্কা/ক্বদ আফলাহা মান জাক্কাহা/ও সিয়াবাকা ফাত্বহহির)

২. কাঙ্খিত মান তৈরি (ওসারিয়ু ইলা মাগফিরা.../ওমান জুহজিয়া আনিন নার.../তায়াআনু আলাল বিররি ওত তাকওয়া)

৩. মৌলিক কাজ সমূহের পর্যালোচনা (যেগুলো এজন ছাত্রকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ, যোগ্যতা সম্পন্ন, চরিত্রবান, জান্নাত উপযোগী বানাবে)


ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন?

দ্বীন ইসলামকে আল্লার জমীনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এমন একদল আদর্শ কর্মীর প্রয়োজন, যারা-

 

১. নিজেরা সেই বিধান অনুযায়ী চলতে

২. অন্যদেরকেও এ পথে ডাকতে

৩. জ্ঞান, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করতে

৪. নিয়মানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খলতা এবং সুষ্ঠ পরিকল্পনা করতে

৫. সকল কর্মীদের গোটা জীবনকে গড়ে তুলতে

৬. প্রতিদিন নিজ কাজের হিসাব পর্যালোচনা করতে

৭. ভুল ক্রটিগুলো দূর করার আন্তরিক ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালানো

৮. সর্বোত্তম ও বিজ্ঞান সম্মত উপায় নিজেকে তৈরিতে


কুরআন হাদিসে এর গুরত্ব কতটুকু?

-সূরা বনি ইসরাইলের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا “আপন কর্মের রেকর্ড কর আজ তোমার নিজের হিসাব করার জন্য তুমিই যথেষ্ট।”


-আল্লাহ আরো বলেন, 

 يَوْمَ تُبْلَى السَّرَائِرُ (৯) فَمَا لَهُ مِنْ قُوَّةٍ وَلَا نَاصِرٍ (১০)

যে দিন গোপন বিষয়াদি ফাঁস করা হবে। অতএব তার কোন শক্তি থাকবে না। আর সাহায্যকারীও না। (সূরা তারিক : ৯-১০)


-ইয়াওমা নাদয়ু কুল্লুয়ু নাসিম বি ইমামিহিম, ফামান উতিয়া কিতাবাহু বি ইয়ামিনি ফাউলায়িকা ইয়াকরায়ুনা কিতাবাহুমওলা ইয়াজলামুনা ফাতিলা [যেদিন আমি প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামসহ ডাকব। অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণ অবিচার করা হবে না] (বনি ইসরাঈলঃ ৭১)


-অন্য আয়াতে আছে, "ফায়াম্মান উতিয়া কিতাবাহু বি ইয়ামিনিহি ফাসাওফা ইয়ু হাসাব হিসাবাই ইয়াসিরা ও ইয়ান কালিবু ইলা আহালিহি মাসরুরা"


-কিরামান কাতিবিনা ইয়ালামুনা মা তাফআলুন (ইনফিতারঃ ১১-১২)


-আল ইয়াওমা নাকসিমু আলা আফওয়া হিহিম...(ইয়াসিনঃ ৬৫)


-ইয়াকুলুনা ইয়া ওয়াইলাতানা মালি হাজাল কিতাব লা ইয়ুগাদিরু....(কাহাফঃ ৪৯)


-আল কাইয়িসু মান দানা নাফসাহু ফা আলিমা.…(হাদীস)


-হযরত উপর রাঃ বলেছেন “আল্লার কাছে হিসাব দেওয়ার আগে তুমি নিজেই নিজের হিসাব নাও।” (আছার)


ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষনের গুরুত্বঃ

১. ব্যক্তিগত রিপোর্ট আয়না স্বরূপ (আয়না কখনো ভুল করে না)

২. ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনের সহায়ক (সকল কাজ পরিকল্পিত ভাবে শেষ করা যায়)

৩. ইসলামী সংগঠনের কর্মীর অপরিহার্য গুনাবলী (এটি মানোন্নয়ন ও মানসংরক্ষণের সহয়ক)

৪. ব্যক্তি জীবন গঠনের মাধ্যমেই ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব তৈরি হয় (সেজন্য প্রস্তুত হওয়া যায়)

৫. আখিরাতে হিসাবে জন্য এখন থেকে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া যায়।

৬. একটি আন্দোলনের জন্য একই মানের জনশক্তি তৈরি হয়।

৭. নিজের মান নিজেই পর্যালোচনা করা যায়।



✔ব্যক্তিগত রিপোর্টের বিভিন্ন দিকঃ

(কুরআন হাদীস সাহিত্য পড়ে জ্ঞানের বিকাশ ছড়িয়ে)

১. কোরআন অধ্যয়নঃ

ক) ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস।

খ) শয়তানকে পরাজিত করতে হলে কোরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা দরকার।

গ) জীবন চলার পথ চিনতে কোরআন অধ্যয়ন প্রয়োজন।


২. হাদীস অধ্যয়নঃ

ক) ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস।

খ) কোরআন বুঝার সহায়।

গ) পঠিত হাদীসের আলোকে পর্যাক্রমে নিজের জীবন গড়তে হবে।


৩. ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নঃ

ক) ইসলামী আদর্শ জানতে বুঝতে ও মানতে ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন অপরিহার্য।

খ) আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা দরকার।

গ) প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘন্টা হলেও ইসলামী সাহিত্য পাঠ করা।


৪. পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নঃ

ক) ছাত্রত্ব বাদ দিয়ে শিবির নয়।

খ) ভাল শিবির কর্মীর অন্যতম দাবী ভাল ছাত্র হওয়া।

গ) সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করতে পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন করতে হবে।

ঘ) নিয়মিত ক্লাসে যোগদান ও পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে তৎপর হওয়া।


৫. জামায়াতে নামায আদায়ঃ

ক) আল্লার সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করা।

খ) জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য রাসূল (সঃ) কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

গ) একাকী নামায পড়া অপেক্ষা অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।


৬. কর্মী যোগাযোগঃ

ক) অন্যান্য ভাইদের অবস্থা জানার জন্য নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা।


৭. বন্ধু সমর্থক যোগাযোগ ও বই বিতরণঃ


৮. দাওয়াতি কাজ ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনঃ

অল্প সময় হলেও প্রতিদিন সংগঠনের জন্য কিছু কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা।


৯.শরীর চর্চা ও খেলাধুলাঃ

 মন মানসিকতা সুস্থ্য রাখে।


১০.পত্র পত্রিকা পাঠঃ

দেশ বিদেশের চলমান অবস্থা জানতে হলে পত্র-পত্রিকা পাঠের কোন বিকল্প নেই।


১১.আত্ম সমালোচনাঃ

ক) জীবনকে গতিশীল করে।

খ) মনে অহংকার সৃষ্টি করে না।

গ) প্রদর্শনেচ্ছা জন্মাতে পারে না।


ব্যক্তিগত রিপোর্ট নিয়মিত সংরক্ষণে করণীয়ঃ

১. বাদ ফজর কুরআন হাদিস অধ্যয়নের পরপর আগেরদিনের রিপোর্ট লিখে ফেলা।

২. দুপুরের খাবারের পর পত্রিকা পাঠ ও সাহিত্য অধ্যয়নের সময় রাখা।

৩. বাদ মাগরিব অন্য কোন কাজ না রেখে পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন করা।

৪. বাদ আসরের পরের সময়কে দাওয়াতি কাজের জন্য নির্ধারণ করা।

৫. সকাল বেলা না ঘুমিয়ে খেলাধুলা বা পড়ার অভ্যাস করা।

৬. ঘুমানোর পূর্বে প্রতিদিনের আত্মসমালোচনা শেষ করা।

৭. দায়িত্বশীলকে রিপোর্ট দেখিয়ে পরামর্শ নেয়া।


সতর্ক হওয়া উচিৎ

১. কোন কারনে যাতে একদিনে কয়েকদিনের রিপোর্ট না লিখি।

২. রিপোর্টকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে না লিখি।

৩. দায়িত্বশীলদের চাপে পড়ে রিপোর্ট সংরক্ষণ না করি।

৪. রিপোর্ট পর্যালোচনা বা জবাবদিহিতা প্রোগ্রাম স্কীপ না করি।

৫. দায়িত্বহীনতার সাথে রিপোর্ট না রাখি (ধ্বংস তার জন্য যার আজকের দিনটি আগামীকালের চেয়ে উত্তম হলো না)

Post a Comment

0 Comments

Close Menu