সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুবসমাজের করণীয়

 


একবিংশ শতাব্দীর এই পৃথিবী যুব সমাজকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক ভয়াল চ্যালেঞ্জের মুখে। এ যেন হাতের তালুতে রাখা জলন্ত কয়লার মত, এ যেন কাঁদার মধ্যে বসবাস করেও শরীরকে পরিচ্ছন্ন রাখার মত, এ যেন কন্টকাকীর্ণ পথে চলা পথিকের কাঁটার আঘাত মুক্ত পা ফেলার মত। তবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা যুব সমাজের জন্য কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। গড্ডালিকা প্রবাহে গা বাসিয়ে না দিয়ে তাদের প্রয়োজন  সাহস ও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে আসা। জাতীয় কবির ভাষায়,

‘‘কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ               

এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি নিতে হবে তরী পার’’

গ্রেগরীয় পুঞ্জিকা অনুসারে, ২০০১ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে একবিংশ শতাব্দিকে বলা হয়। এ শতাব্দি হলো জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরীর শতাব্দী। বর্তমান পৃথিবীকে বলা হয় এষড়নধষরুধঃরড়হ এর যুগ। ফলে পৃথিবী চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এ শতাব্দীতে জাতিসংঘের তত্ত¡বধানে স্বাধীনতা অর্জন করে পূর্ব তিমুর (২০০২), মন্টিনিগ্রো (২০০৬), দক্ষিণ সুদান (২০১১)। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে স্বাধীনতা ঘোষনা করে কসোভো (২০০৮), দক্ষিণ ওসেটিয়া (২০০৮), আবখাজিয়া (২০০৮)। এছাড়া ১৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ডেনিস টিটো মহাকাশ পর্যটক হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ ভ্রমণ করে (২০০১), কলম্বিয়া নভোখেয়াযান বিপর্যয়ে ৭জন মহাকাশচারী মৃত্যু বরণ করে (২০০৩), ইরান নিজেদের তৈরী প্রথম স্যাটেলাইট ‘উমিদ’ উৎক্ষেপণ করে, বাংলাদেশ ২৯৬৮ কোটি টাকা খরচ করে উৎক্ষেপণ করে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ (১১ মে ২০১৮)।                         

এত সব উৎকর্ষের মাঝেও পৃথিবীর লখো মানুষ আজ অনাহরে, অসংখ মানুষের নেই থাকার এতটুকু জায়গা, অশান্তি, নগ্নতা আর বেহায়াপনায় ভরে গেছে সারা পৃথিবী। যুব সমাজই যেহেতু পৃথিবী পরিচালনার প্রাণশক্তি, তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা যুব সমাজেরই দায়িত্ব।

সমসাময়িক প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ:-

ইসলাম ভীতিঃ 

আজ সারা পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলিমকে একটি সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যার ফল¯্রুতিতে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্সে মুসলিম নারীদের জন্য কর্মস্থল ও প্রকাশ্যে জনবহুল স্থানে ‘হিজাব’ পরা নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংসের ফলে নিহত হয় ২৯৯৬ জন আর আহত হয় প্রায় ৬ হাজার, ধ্বংস হয় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের সম্পদ। এই ঘটনার দোষী সাব্যস্ত করে মুসলমানদের উপহার দেয়া হল একরাশ ঘৃনা, অথচ এই জাতীয় কোন কাজই তারা করেনি। তখন থেকে ইসলাম, ইসলামপন্থী দল, ইসলামের পূণর্জাগরণ নিয়ে অমুসলিমদের এলার্জি আরো বেড়ে গেল। অথচ ইতিহাসের অনবদ্য স্বীকৃতি ইসলামই আগামীর বিজয়ী জীবন ব্যবস্থার নাম। দার্শনিক নিকেলসন বলেন, দদডরঃযরহ ১ংঃ পবহঃঁৎু, ঃযব যিড়ষব ড়ভ ঊঁৎড়ঢ়ব, ঢ়ধৎঃরপঁষধৎষু ঊহমষধহফ, রিষষ যধাব হড় পযড়রপব নঁঃ ঃড় বসনৎধপব ওংষধস.’’ 

পরাশক্তির ষড়যন্ত্রঃ

দেশের ভিতরে বা বাহিরে বড়সড় বিপদের সামান্যতম ইঙ্গিত যদি প্রথম কেউ পেয়ে থাকে তারা হল গোয়েন্দা সংস্থা। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয় দঋরৎংঃ খরহব ড়ভ উবভবহংব’ তাদের কাজ হলো কেঁচো খুঁড়ে সাপের সন্ধান করা। এই গোয়েন্দা সংস্থা গুলো ব্যবহৃত হয় এক দেশের বিরূদ্ধে অন্য দেশকে দমানোর কাজে। বিশেষ করে, পশ্চিমা দেশগুলো মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সকল গোপন খবর ও তাদের দূর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে এই গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে প্রমাণ করেছে তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা। এদের মধ্যে মোসাদ (ইজরাইল), সিআইএস (ইংল্যান্ড), এসভিআর (রাশিয়া), সিআইএ (আমেরিকা), বিএনডি (জার্মান), র (ভারত), ডিজিএসই (ফ্রান্স) অন্যতম। বলা হয়ে থাকে যে, স্বামীর বিরূদ্ধে স্ত্রীকে গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বানিয়ে তারা সফল হয়েছে। তাদের কাছে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতে কিছু নেই।

বিশ্বব্যাপী ধ্বংসলীলাঃ

বর্তমান পৃথিবীর বড় একটি সংকট হলো এক দেশের সাথে অন্য দেশের যুদ্ধ, খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এই অশান্তির নেপথ্যে কাজ করছে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র। তারাই এসব যুদ্ধে অস্ত্রের যোগানদাতা, অস্ত্রের মজুদ শেষ হলে তারাই সুকৌশলে যুদ্ধ বিরতি দেয়, আবার অস্ত্র তৈরী করে যুদ্ধ শুরু করতে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে। অন্যান্য জাতি গোষ্ঠী এসব যুদ্ধে লিপ্ত মাঝখানে অস্ত্র বিক্রি করে হাজার হাজার ডলার আয় করে তারা। সংখ্যায় মাত্র ১ কোটির মত হয়েও এ পৃথিবীর অশান্তির মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে এই ইহুদী জনগোষ্ঠী। ইরাকে তাদের কারনেই নিহত হয়েছে ১ লক্ষ শিশু।

মিডিয়ার ষড়যন্ত্রঃ 

আজ সারা পৃথিবীতে ইসলামের বিরূদ্ধে সকল মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো মূলে রয়েছে মিডিয়া। চরমপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী ও তাদের কার্যক্রম অধিকাংশই তাদের বানানো। তারা তিলকে তাল করে প্রচার করে। এছাড়া মিথ্যা খবর প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, ক্ষমতাসীন দলের দালালি ও অতি উৎসাহী হয়ে অযথা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা তাদের কাজ। নৈতিকতা বিবর্জিত গান, নাটক, সিরিয়াল প্রচার, বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা, অতিমাত্রায় গুণাগুণ বর্ণনা করে বিজ্ঞাপন প্রচার, মাঝে মাঝে কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিতর্কীত ভাবে প্রচার করাই তাদের নিত্ত নৈমিত্তিক কার্যক্রম। অথচ আর্ত মানবতার পক্ষে প্রচার করার মত হাজারো খবর তারা অবলীলায় এড়িয়ে যায়। এজন্য তাদের এই হলুদ সাংবাদিকতায় (ণবষষড়ি লড়ঁৎহধষরংস) বিশ^াস না করে মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল।

অবাধ যৌনাচারঃ

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস এখন স্বাধীন যৌনাচার। প্রাচ্যের দুনিয়ার বিবাহ বহির্ভূত ‘লিভ টুগেদার’, সমকামীতা, উলঙ্গপনা এবং নারীদের একাধিক পুরুষ সঙ্গী এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত, যার হাওয়া ভারত পর্যন্ত লেগেছে। আমেরিকার প্রায় ৮০ ভাগ সন্তানের পিতৃ পরিচয় নেই। ভারতের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদের ৭০ ভাগ বিবাহিত নারী পরকীয়ার সাথে যুক্ত। বাংলাদেশেও ভালোবাসা দিবসের নামে বেহায়পনাকে উস্কে দেয়া, বিভিন্ন সিনেমা আর নাটকের মাধ্যমে বিয়ের পূর্বে রিলেশনশীপকে উৎসাহ দেয়া, গ্রুপ স্টাডি আর র‌্যাগ ডে পালনের নামে ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা, কিছু অনলাইন শিক্ষা সেন্টারের শিক্ষকদের উৎসাহ অবাধ যৌনাচরের পথকে করেছে সুগম।

নেশাগ্রস্থতাঃ 

বর্তমানে আমাদের নতুন প্রজন্ম ডুবে যাচ্ছে মাদকের অতল গহŸরে। এটি তাদের অধঃপতনের প্রধান কারনগুলোর মধ্যে একটি। আর এসব মাদক দ্রব্যগুলো সমাজে খুবই সহজলভ্য। মাদক প্রতিরোধ কমিটি থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসায়ীদের আটকের কাজে নিয়জিত আইন শৃংখলা বাহিনী পর্যন্ত আজ মাদকের সাথে সম্পৃক্ত। দেখা যায়, যে অপরাধে গেপ্তার হয়ে আসামী জেল খানায়, সেই জেল খানাগুলো আজ মাদকের আঁতুড় ঘর। এসবের একমাত্র কারন নৈতিকভাবে আমরা বিপর্যস্থ। এ সম্পর্কে ড. মরিয়ম জামিলা বলেন, ``The high devours rate, Unhappy marriage, Domestic violence, Meneral disease, Mental disoerder, Drug addiction, Suicide, Crimes, Corruption all of this has a cause of all causes is absence of Ethical Values''


অতএব, সচেতন যুবসমাজের উচিত মোটা দাগে চিহ্নিত এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করা। এক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনে রয়েছে আমাদের জন্য সমাধান। কুরআন বলছে, ‘‘আল্লাহ ভীত লোকদের জন্য এই কুরআনে রয়েছে পথের সন্ধান (সুরা বাকারাঃ ২)”।  কারন, কুরআনের উপদেশ হলো, ‘‘আর তোমরা যিনার নিকটবর্তীও হয়ো না, নিশ্চয়ই এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ (সুরা বনী ইসরাঈলঃ ৩২)”  রাসুল সঃ বিদায় হজ্জে¦র ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, ‘‘আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন এই দুটি জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহ (মুসতাদরাকে হাকেমঃ ৩১৯)’’।  বর্তমান পৃথিবীর সংকট নিরসনে দার্শনিক জর্জ বার্নাড’শ বলেন, ``If man like Mohammad (pbuh) were to assume the dictatorship of the modern world, He would succeed in solving all it’s problems in a way that would bring so much needed peace and happiness’’

কবি মাহেরুল কাদেরীর আনুবাদ দিয়ে শেষ করছি-

‘‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দিকে দিকে

ফিতনা ও ফাসাদের তান্ডব নর্তন,

জীবন বিধানের তরে কুরআনের মেনিফেস্টো তাই প্রয়োজন।’’


Post a Comment

0 Comments

Close Menu